মো. নুরুল আলম, চন্দনাইশ »
ঘনিয়ে এসেছে কোরবানির ঈদ। কামারদের হাতুড়ি পেটার টুং টাং শব্দও বহন করছে কোরবানির ঈদের বার্তা। দা, ছুরি, চাপাতি, কিরিচ তৈরি এবং বিক্রি শুরু হয়েছে কোথাও কোথাও। তবে প্রতিবছরের মতো এবার চাহিদা একেবারেই কম। তাতেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চন্দনাইশের কামার পাড়ার শ্রমিকদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলার খাঁনহাট, কালীহাট, ধামাইরহাট, দোহাজারী পৌরসভা, জোয়ারা, কাঞ্চনাবাদ, বাদামতল, বৈলতলী ইউনুস মার্কেট, ধোপাছড়ি বাজার, দেওয়ানহাট, সাতবাড়িয়া, বাগিচাহাটের প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ কামার পট্টিতে কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে।
পুরনো কামারের দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন হাটবাজার ঘিরে বসেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগায় গুনে পুড়িয়ে দা, ছুরি, বটি, কিরিচসহ কোরবানির ঈদে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে দেদারসে। শুধু নতুন করে তৈরি নয়; তাদের কর্মব্যস্ততা চলছে পুরনো সরঞ্জাম মেরামতেও। এছাড়া একইসঙ্গে শান দেওয়ার মেশিন কাঁধে চাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ কেউ।
শ্রমিকরা বলছেন, পুরো বছর কাজ চললেও তারা মুখ উখিয়ে থাকেন কোরবানির ঈদের দিকে। কোরবানির ঈদের কামাইয়ে তারা ভর করেন পুরো বছরের। করোনার কারণে বেশ কয়েক মাস দোকানপাট বন্ধ থাকায় সারাবছর তেমন একটা আয় হয়নি তাদের। প্রতিবছর কোরবানিতে তারা আগুনের তপ্ত শিখায় পুড়ে রাতদিন কাজ করলেও এবারে লকডাউনের কারণে দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি দোকান খোলা রাখতে পারছেন না। এসময়ের মধ্যেও আনাগোনা নেই ক্রেতার। তাই এবারের কোরবানির ঈদে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা থাকলেও শঙ্কায় রয়েছেন তারা। দেশি চাপাতিগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ওজনের চাপাতির দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিদেশি চাপাতির দাম ৭০০ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া লোহার তৈরি ছোট ছুরি ৮০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পশু জবাইয়ের ছুরি মিলছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
বিভিন্ন সাইজের চাপাতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। দা-বঁটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০-৭০০ টাকায়।
ক্রেতা আব্দুর রউফ বলেন, এবার কোরবানির পশু কেনা নিয়ে শঙ্কায় আছি। তবুও পুরাতন চাপাতিটি মেরামত করে রাখছি। যদিও কোরবানির জন্য নতুন চাপাতির দরকার ছিল; আর্থিক সঙ্কটের কারণে তা কিনতে পারছি না।
ছুরি ও চাপাতি তৈরি করতে আসা টিপু আহমদ বলেন, ভাবছিলাম করোনার কারণে হয়তো এবার সবকিছু বন্ধ থাকবে। কোরবানি দিব ছুরি, চাপাতি এগুলোর দরকার। যদি দোকান বন্ধ থাকে এগুলো কোথায় পাবো এ নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল। সবকিছু খুলে না দেওয়ায় এগুলো তৈরি করতে করতে কষ্ট পেরেছি। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দাম একটু বেশি।
খাঁনহাট বাজারে কর্মকার শিবু দাশ ও ছোটন দাশ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কয়েক মাস দোকান বন্ধ থাকায় এবছরে বেশ লোকশানের মধ্যে রয়েছি। ঈদের কারণে কাজ বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে। আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তাদের ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেরও শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি।
তারা আরও বলেন, সারা বছর দোকান খুলে বসে থাকেন। তেমন কোন কাজ কর্ম থাকে না। দোকান ভাড়াটুকু তোলা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারা কোরবানি ঈদের একটি মাসের অপেক্ষায় থাকেন। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে মুসলমাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে নতুন কিংবা মেরামত করতে হয় দা, ছুরি ও বটির। এই আয় দিয়েই পরিবার আর দোকানের সারা বছরের পুঁজি হয়।
এ বিষয়ে খাঁনহাট বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কামার শিল্পকে আরো আধুনিক করতে এর বাজার সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি । সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের চন্দনাইশে কামাদেরকে সুদ মুক্ত ঋণ দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুরে দাঁড়াবে ।