থাইংখালী খালের ১৫ স্পটে অবৈধ বালি উত্তোলন

উখিয়ার থাইংখালী খালের ১৫ স্পট থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ভিটেবাড়ি, ফসলিজমি, গ্রামীণ সড়ক বিলীন হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া  :                                                                                                                   উখিয়ার থাইংখালী খালের ১৫ স্পট থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ড্রেজারে বালি উত্তোলন ও ভারী যানবাহনে উত্তোলিত বালি পাচার করার ফলে থাইংখালী-তেলখোলা ৪ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। উক্ত সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ঠিকাদারকে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। এভাবে গ্রামীণ যোগাযোগ বিপন্ন হওয়ার কারণে তেলখোলা, মোছারখোলাসহ ২০টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সময় মতো বাজারজাত করতে না পারায় তাদেরকে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতে হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবার।

সরেজমিন থাইংখালী ব্রিজ হয়ে তেলখোলা-বটতলী পর্যন্ত বয়ে যাওয়া খাল প্রত্যক্ষ করে ও স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, থাইংখালী এলাকার ১৫ সদস্যের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে খালটি নিয়ন্ত্রণ করে ভোগদখল করছে দীর্ঘদিন থেকে। তেলখোলা ঢালারমুখ গ্রামের অজি উল্লাহ (৫৫), সেকান্দর আলী (৬০) সহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন জানান, অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে তাদের বাপদাদার ভিটেমাটি খালের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। নিজস্ব জমিজমা না থাকায় তাদেরকে এখন বনভূমির জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। তারা আরো জানান, বালি উত্তোলনে তাদের ক্ষয়ক্ষতির কথা বললে ওই সিন্ডিকেট হুমকি-ধমকি প্রদর্শনপূর্বক বলে বেড়ায়, তারা নাকি খালটি সরকারিভাবে লিজ নিয়েছে। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জানান, খালের একাংশ ডাক দিয়ে চৌদ্দাংশ থেকে বালি উত্তোলন ও পাচার করা হচ্ছে। জায়েজ করা হচ্ছে সরকারি অর্থের। অথচ অবৈধ পথে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্বের ঘাটতি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানার জন্য উখিয়া ভূমি অফিসের সাথে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান জানান, তিনি বিভিন্ন সময়ে থাইংখালীসহ উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বালিভর্তি ট্রাক, বালি উত্তোলনে ব্যবহৃত মেশিন ও বালি পাচারকারীকে আটক করে নগদ অর্থ জরিমানা ও আইনের হাতে সোপর্দ করেছেন। তিনি বলেন, যেকোনো সময়ে বালি উত্তোলনের ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পালংখালীর তেলখোলা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মানিক চাকমা, স্থানীয় হেডম্যান বাউনো চাকমা, স্থানীয় গণ্যমান্য ও সমাজ-সর্দার শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে টানাবৃষ্টির ফলে তেলখোলা বটতলী থেকে থাইংখালী পর্যন্ত সড়ক পথ অচল হয়ে পড়েছে। নির্মাণাধীন সড়কগুলো বড়-বড় খানাখন্দক ও গর্তে পরিণত হয়েছে। এ সড়ক পথ কবে নাগাদ উন্নয়নের আলো দেখবে, সে ব্যাপারে কেউ সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারছে না। জোরালো দাবি উঠেছে, ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে থাইংখালী-তেলখোলা সড়ক পাকা করা দরকার।

এ প্রসঙ্গে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী কোনো প্রকার মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। উপজেলা বনরেঞ্জ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, বাজারে বালির চাহিদা ও মূল্য অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে বালি সন্ত্রাসীচক্রের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব চক্রের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না সরকারের মূল্যবান বনসম্পদ।