তরুণের দেশ বাংলাদেশ

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগাতে হবে

দেশের সব ব্যক্তির জনমিতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশের সার্বিক প্রক্রিয়াই হলো জনশুমারি। জনশুমারি কেবল জনসংখ্যা কমা বা বাড়ার পরিসংখ্যান নয়, এর ভিত্তিতেই দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
দেশে চূড়ান্ত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। যার মধ্যে ২৮ শতাংশ তরুণ। আর ৬২ শতাংশ মানুষই কর্মক্ষম। মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগের ১ ভাগ এখন তরুণ, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। সংখ্যায় ৪ কোটি ৭৪ লাখ। তারুণ্যের পাশাপাশি দেশে কর্মক্ষম মানুষের পাল্লাও ভারী। মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। সংখ্যায় যা ১০ কোটি ৫০ লাখ।
জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত রোববার সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তরুণদের সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতির এ সুবিধা বেশি দিন থাকে না।
বর্তমান বাজারব্যবস্থা সামনে রেখে দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। এতে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সামনে রেখে তারুণ্যকে চাকরির বাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
জনমিতির লভ্যাংশকে (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) সফল করতে চাইলে তরুণ জনগোষ্ঠী যাতে গুণগত শিক্ষা পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। তাঁদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যদি তরুণদের গুণগত শিক্ষা দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে না পারে, তাহলে জনমিতির লভ্যাংশের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ।
তারুণ্যের বয়স বিভাজন নিয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মোট জনগোষ্ঠী এখন ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীর হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীর হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ হিসেবে ধরা হয় দেশে। সে হিসেবে তারুণ্যের হার ২৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, সংখ্যায় যা পৌনে পাঁচ কোটি।
দেশে প্রবীণ বা ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। মোট জনগোষ্ঠীর ১ কোটি ৯৮ লাখ মানুষ ষাটোর্ধ্ব। এ হার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে দেশের প্রথম শুমারিতে জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন। ১৯৮১ সালের শুমারিতে তা বেড়ে ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জন হয়। ১৯৯১ সালের শুমারিতে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ জনে। আর ২০০১ সালে হয় ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণননায় দেশের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন।
জনশুমারি কেবল জনসংখ্যা কমা বা বাড়ার পরিসংখ্যান নয়, এর ভিত্তিতেই দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। শুমারির সঠিক উপাত্তের ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও সম্পদের সুষম বণ্টন করতে হয়।