ডিমের বাজার আবারও চড়া

রাজিব শর্মা

বাজারে মাছ ও মাংসের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নিত্যদিনের খাবারে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু তাতেও বিধি বাম! ডিমের দাম বাড়ায় চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। এমনিতে একের পর এক নেতিবাচক পরিস্থিতি যেমন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
গতকাল রবিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার, বকশিরহাট এবং পাহাড়তলী বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিমের যোগান থাকা সত্ত্বেও চড়া দামে ডিম বিক্রি করছে ডিম আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গত দুই দিনের ব্যবধানে ডজন প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে ডিম বিক্রি করছে তারা।
হঠাৎ ডিমের দাম বাড়তির কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন ব্যবসায়ী তার কারণ বলতে সুপ্রভাতকে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। হঠাৎ এমন দাম বাড়ায় বাধ্য হয়ে ডিম কেনা থেকে বিরত থাকছেন অধিকাংশ ক্রেতা।
গতকাল রবিবার (২২ জানুয়ারি) নগরীর রেয়াজউদ্দিন, বক্সিরহাট এবং পাহাড়তলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১-১২ টাকায় এবং ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২৮ থেকে ১৩২ টাকায়। অথচ গত দুইদিন আগেও বাজারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে ডিম বিক্রি হয়েছে। এরকম হঠাৎ করে কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়েছিলেন গতবছর সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে। তখন ডজনপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগীর ডিম বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ চড়া বাজার দুই মাস ধরে ডিম ব্যবসায়ীদের দখলে ছিলো। পরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা করলে তা ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকার মধ্যে নেমে আসে। এখন শীতকালে ফার্ম বন্ধ, মুরগি থেকে ডিম কম পাড়ার বাড়তি অজুহাতও সামনে এনে আবারো বাজারে চড়া দামে ডিম বিক্রি করছে তারা।
গতকাল রবিবার সকালে (২২ জানুয়ারি) রিয়াজউদ্দিন বাজার ও বক্সিরহাটের ডিম পাইকারী বিক্রেতাদের আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
ব্যবসায়ীরা এও বলছেন, ‘বাজারে ডিম নেই। দেশে ডিম সংকট তাই আমাদের বাড়তি দামে মার্কেট থেকে ডিম কিনতে হচ্ছে।’
বক্সিরহাটের ডিম ব্যবসায়ী কালাম বক্স বলেন, ‘পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির সাদা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৮ টাকা। হাসেঁর ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ২১০ টাকা। পাহাড়তলী বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে, যার ফলে একটু বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
রেয়াজউদ্দিন বাজারের ডিম আড়তদার সওগাদ ট্রেডার্সের মালিক আলী আহমেদ বলেন, ‘সাধারণত শীতকালে মুরগী ডিম কম পাড়ে। তাছাড়া পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়াতেই অনেক ফার্ম বন্ধ হয়েছে। যার কারণে বাজারে ডিমের সংকট। তাই একটু দামে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই কয়েকটাকা বাড়তি দামে বিক্রি করছি। আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিম ডজন ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি।’
পাহাড়তলী বাজারের আড়তদার ফারুক বাণিজ্যালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ফারুক বলেন, ‘আমাদের পুরো আড়ত খালি। বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। যার ফলে বাজারে ডিমের দাম একটু বাড়তি।’
ডিমের দাম কমার সম্ভাবনা আছে কি’না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো বলতে পারছি না। তবে আমরা কম দামে কিনলে বাজারে কম দামে বিক্রি করবো। আগে যেখানে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেই হতো, এখন সেখানে বিনিয়োগ করতে হয় ৬-৭ লাখ টাকা। এছাড়া পাল্লা দিয়ে কমছে ডিমের বিক্রি। আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ পিস ডিম বিক্রি হতো এখন সেখানে ৪০-৫০ হাজার পিস বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ায় বিক্রি এবং লাভ কমেছে।’
অন্যদিকে ডিমের হঠাৎ দাম বাড়াতেই ক্রেতাদের রয়েছে নানান অভিযোগ। বক্সিরহাটে ডিম কিনতে আসা মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘মাছ ও মাংসের দাম বাড়াতেই আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে ডিমের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন বাজারে এসে শুনি হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়তি। হাঁসের ডিম ২১৫ টাকা ডজন বিক্রি করছে। তাহলে ডিমের বাজারও সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।’
ডিমের উচ্চমূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল হাই সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বর্তমান পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়ছে। ২০১৭ সালে যে ভুট্টা ১৭ টাকায় বিক্রি করছে তা এখন ৪২ টাকার উপরে। তাছাড়া পোলট্রি শিল্পের ৮০ শতাংশই আসে আমদানি হয়ে। বর্তমান খামারির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। যদি সব খরচের সমন্বয়ে ডিমের দাম কয়েক টাকা বাড়ে বা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা যায় তাহলে মুরগীর খামার শিল্পটিকে রক্ষা করা যাবে। যদি তা না হয় তবে দেশের লক্ষ লক্ষ খামারি যুবক বেকার হয়ে যাবে।’