টিসিবির কার্ড ‘খুঁজছে’ মানুষ

পণ্য নিতে ট্রাকের সামনে সকাল থেকে ভিড়

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

সকালের কর্মব্যস্ততা শুরু হতে না হতে রাস্তার ধারে ফুটপাতে মানুষ লাইন ধরে বসে আছে। নতুন যারা আসছেন, তারাও ধীরে-সুস্থে লাইনের পিছনে গিয়ে বসছেন। জিজ্ঞেস করলে জানান, তারা টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছেন। এভাবে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর ওই স্থানের একটু পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ট্রাক। বিক্রির প্রস্তুতি শুরু করতে না করতেই শুরু হয়ে যায় ভিড়। ট্রাক দেখে আরও অনেকে আসতে শুরু করে।
গতকাল রোববার আনুমানিক সকাল নয়টা থেকে নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কের পাশের চৌমুহনী এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেছে।

লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে আসা সুরেশ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘টিসিবি কার্ড আছে বলে বাজারের তুলনায় কম দরে অনেক কিছু কিনতে পারছি। বাজারে তো যাওয়াই যায় না। প্রতিটি জিনিসের যে দাম! টাকা শেষ হয়ে যায় কিন্তু সাথে থাকা থলের তলাও ভরে না। এ সময়টা আমাদের দুর্দিন। আর এ দুর্দিনে টিসিবির পণ্য পাওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু এ পণ্যগুলো যেন কেউ কারচুপি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক হলে আমাদের কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’

এদিকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সাধারণ মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি থাকছে না। আগে কার্ড ছাড়া টিসিবির পণ্য সবাইকে দেওয়া হলেও এখন কার্ড ছাড়া কোনো পণ্য দেওয়া হয় না। ফলে অনেক মানুষ নতুন করে কার্ড বরাদ্দের আবেদন জানাচ্ছেন। কার্ড পেতে ঘুরছেন কাউন্সিলরের কার্যালয়ে।
এদিকে লাইন না ধরে এক ব্যক্তিকে লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের মাধ্যমে পণ্য কেনার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। কেন লাইন না ধরে অন্য ব্যক্তিদের একেকজনকে দিয়ে একেক ধরনের পণ্য কিনছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কার্ড থাকলে কি এতজনের হাতে-পায়ে ধরতে হয়? আমি এখানে (নগরে) ভাড়া বাসায় থাকি। এখানে কারো সাথে তেমন চেনা জানাও নেই। তাই আমরা কার্ড করতে পারিনি। সরকার এ কার্ড দিয়েছে নিন্মআয়ের মানুষের জন্য। কিন্তু পরিচয় না থাকলে কেউ তো কাউকে কার্ড দেয় না।’
কার্ড প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ড-৪ এর কাউন্সিলর তছলিমা বেগম (নূরজাহান) বলেন, ‘কী আর বলবো! প্রায় দিনই কার্ড করার জন্য লোকজন আসেন। অনেকে ফোনেও যোগাযোগ করেন। কার্ডের কোনো বরাদ্দ আসলে তাদের জানায়। এ নিয়ে অন্যান্য কাউন্সিলর ও মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা আমাদের হয়েছে। কার্ডগুলোতো টিসিবির। তাদের বরাদ্দ দেওয়া কার্ডগুলো আমরা সমন্বয় করে বিতরণ করেছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ৩ লাখ ৮৩জন এ কার্ড পেলেও চট্টগ্রামে অনেক মানুষের বসবাস। এর মধ্যে নিন্মআয়ের মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তবে পরিচিত হওয়ায় কার্ড পাওয়ার অভিযোগ আমরাও শুনি। আসলে নগরবাসীর পরিচিতি হলো এনআইডি কার্ড ও জাতীয়তা সনদে। এগুলোর জন্য আবেদন করতে হয়। যারা করেছেন তারা পেয়েছেন। অনেকে ওই সময় না করে পরে করার কথা ভেবেছিলেন হয়তো। তার এখন কষ্টে পড়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রায় সব পণ্যের দাম এখন অনেক বাড়তি। মানুষ আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্যতা পাচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষের এখন নিত্যপণ্য কিনতে কষ্ট হচ্ছে। রোজায় এ কষ্ট আরও বাড়তে পারে। তাই টিসিবি যদি সাময়িক সময়ের জন্য হলেও কার্ড না পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে নিম্নআয়ের মানুষ উপকৃত হবে।’
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক (অফিস প্রধান) জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে দুই ধাপে রোজার পণ্য বিক্রি হবে। চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭২টি কার্ডধারী নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রথম ধাপে চার পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন করে কার্ড দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ততো আমরা নিতে পারি না। মন্ত্রণালয় থেকে কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিতরণ করবো। তবে আমার জানা মতে, এখন আর কার্ড বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।’
জানা যায়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) থেকে চট্টগ্রামে ভর্তুকি মূল্যে চিনি, ডাল, সয়াবিন তেল ও ছোলা বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, একজন কার্ডধারী ৬০ টাকা দরে এক কেজি চিনি, প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ ২ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ও ৫০ টাকা দরে এক কেজি ছোলা কিনতে পারছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকাসহ ১৫টি উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় পর্যায় পণ্যগুলো বিক্রয়ে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৪ জন ডিলার। ঈদ পর্যন্ত এ বিক্রয় কার্যক্রম চলবে শুক্রবার ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।