জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ : আর অপরাধ জগতে নয়

চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া চকরিয়া ও পেকুয়ার ১১টি জলদস্যুবাহিনীর ৩৪ সদস্য সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বাঁশখালী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা ভুল স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করবে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। আর যারা আত্মসমর্পণ করবে না তাদের রেহাই নেই।
তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে দস্যু ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হবে। জলদস্যুরা অস্ত্র, গোলাবারুদও সমর্পণ করে। যাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে, সেসব অভিযোগে মামলা চলবে। ইতিপূর্বে ২০১৮ সালে মহেশখালীতে ৪৩জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। সুন্দরবন অঞ্চলে ২০১৮ সালে জলদস্যুরা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
নিরীহ জেলেরা সাগরে যায় মৎস্য আহরণে। জলদস্যুরা নিরীহ এসব জেলেদের গভীর সমুদ্রে হামলা করে মুক্তিপণ আদায়, মৎস্য ও ট্রলার লুণ্ঠন, হত্যার মতো নারকীয় অপরাধ করে। নিরীহ অনেক জেলে তাদের হাতে পড়ে সাগরেই প্রাণ হারায়। অনিশ্চিত ও ভীতিকর হয়ে ওঠে জেলেদের জীবন জলদস্যুদের হাতে, তাদের ঘরে স্বজনদের কান্নার রোল উঠে।
কোস্টগার্ড, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযান চললেও জলদস্যুদের উৎপাত বন্ধ হয়নি। দস্যুদের অনেকে বারবার গ্রেফতারও হয়েছে। তবুও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় দস্যু বাহিনীর তা-ব বন্ধ করা যায়নি। এখন আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তারা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে তবে তা সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণকর।
অপরাধ জগতের সাথে যুক্ত হয়ে জীবিকার সংস্থান কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। এতে যেমন নিজেকে বাঁচানোর জন্য সমাজও পারিবারিক জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে হয়, অন্যদিকে তার স্বজনÑসন্তানদের জীবনও অভিশপ্ত হয়ে ওঠে। দেশে এখন যে উন্নয়ন কর্মকা- শুরু হয়েছে, স্বÑকর্মসংস্থানের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তরুণদের উচিত সে সব উদ্যোগে যুক্ত হওয়া। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে অবৈধভাবে বিদেশে যেতে জীবন বিপন্ন করা কিংবা দস্যুতার মতো অপরাধ জগতের জীবনে জড়িয়ে পড়া কাম্য হতে পারে না। সরকারের উচিত হবে জীবিকার নানা উপায় সৃষ্টি করে তাদের কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা।
ইতোপূর্বে কক্সবাজার জেলায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের এক বড়ো অংশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও ইয়াবা কারবার বন্ধ হয়নি, বরং বিভিন্ন খবরে দেখা যায়, দেশব্যাপী এই মাদকের ব্যবসা ও ব্যবহার হ্রাস পায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানেও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার ও গ্রেফতারের খবর আছে।
জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ নিঃসন্দেহে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বড় সুযোগ। আমরা আশা করি, উপকূলীয় এলাকায় নতুন করে জলদস্যুদের আবির্ভাব ঘটবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মানুষের জীবনÑজীবিকা ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ হলে সমাজ থেকে অপরাধ কমে আসবে। জনজীবনেও স্বস্তি আসবে।