ছুটির দিনে বেড়েছে বিক্রি

অষ্টম দিন : বইমেলায় শিশু উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক »
বই মেলার অষ্টম দিন সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট ছিলো শিরীষ তলা। সাপ্তাহিক ঘোরার দিনের রুটিনটা সবারই যেন সিআরবির বই মেলামুখী। পরিবারের ছোট সদস্যদের নিয়ে সকাল থেকে শিরীষ তলায় আসতে শুরু করেন অভিভাবকরা। এদিন নানা বয়সী পাঠকদের সাথে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। এদিকে অন্যদিনের তুলনায় গতকাল বিক্রি বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বই মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় পাঠকরা বিভিন্ন বই কেনার লক্ষ্য নিয়ে আসলেও নতুন নতুন বই নজর কাড়ছে তাদের। কেউ কেউ পছন্দের লেখকের বই খুঁজছে আবার কেউ কেউ পছন্দের বিষয়ে ঝুঁকছে। সারা বই মেলা যেন এক ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। বই পড়া আর কেনার পাশাপাশি বইয়ের সাথে ফ্রেমবন্দি হতেও দেখা যায় পাঠকদের।
নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর কুমার দাশের লেখা ‘অদেখা কিশোর’, বলাকা প্রকাশনীর মো. আবুল ফয়েজের ‘সর্পদংশন সফলতার গল্প’ ও জামাল উদ্দিনের ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’, কথা প্রকাশ প্রকাশনার আবুল ফজলের ‘রাজ অরাজ’, আফসানা বেগমের প্রতিচ্ছায়া, মজিদ মাহমুদের তুমি শুনিতে চেয়ো না, হরিশংকর জলদাসের জীবন ও কর্ম, সাহিত্য বিচিত্রা প্রকাশনার বাদল সৈয়দের জলে ডোবা সূর্যাস্ত, মিশু চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের অভিযাত্রা’।
আবরার হোসেন নামের এক তরুণ পাঠক বলেন, আমি সৈয়দ মুহাম্মদ শাহেদ স্যারের লেখা ‘রনী দাশগুপ্ত’ বইটা কিনলাম। আরও কয়েকটি বই কেনার ইচ্ছে আছে। প্রতিবছরই বই মেলায় আসা হয়। এক অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে বই মেলায়।
বলাকা প্রকাশনার বিক্রেতা শরফুদ্দিন রিজভি জানান, অন্যদিনের চেয়ে আজকে (গতকাল) মানুষ বেশি। বিক্রিও বেশি হয়েছে। আশা করি আগামীতে মানুষ আরও বাড়বে, আরও জমে উঠবে বই মেলা। আজকে নতুন বই হিসেবে আমাদের মো. আবুল ফয়েজের ‘সর্পদংশন সফলতার গল্প’ ও জামাল উদ্দিনের ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’ বই দু’টি এসেছে।
তবে মেলায় পকেটমার, মোবাইল চুরির মত ঘটনা ঘটছে জানিয়ে শাখাওয়াত হোসেন মিলন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, আমি এনায়েত বাজার থেকে আসছি। আমার মোবাইল হাতে ছিল কিন্তু মানিব্যাগ ছিল পকেটে। বই মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর খেয়াল করি আমার মানিব্যাগ চুরি হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বই মেলায় দায়িত্বরত সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বোরহান উদ্দিন জানান, বই মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। আমাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্প করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা প্রস্তুত।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে বইমেলা মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘শিশু উৎসব’। শিশু উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।
নাট্যকার, অধ্যাপক সনজীব বড়ুয়া’র সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র নাথ, সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন শ্যামল, লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর সভাপতি ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মনজু প্রমুখ।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, মোবাইল আমাদের লেখাপড়া এবং সুস্থ চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য মোবাইল প্রয়োজন তবে অতিমাত্রায় মোবাইল আসক্তি আমাদের মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ করে দিচ্ছে। ছেলে মেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে না দিয়ে বই তুলে দেন। শিশুদের মোবাইলে কার্টুন না দেখিয়ে কবিগুরু, বিদ্রোহী কবি, পল্লী কবির কবিতা শেখান; তাদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের শিক্ষা দেন।
বই পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমরা গাড়ি, বাড়ি চেহারার চাকচিক্যের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। অথচ একদিন এসব ধ্বংস হয়ে যায়। বইয়ের জ্ঞান কখনো ধ্বংস হয়না।
বইমেলার গতকালের আয়োজন নিয়ে অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর সভাপতি ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বই মেলার আজকের পর্বের সকাল থেকে বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রাম শুরু হয়। বিকেল ৪টা থেকে ‘শিশু উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যার পর থেকে আবারও শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলার ৯ম দিন সন্ধ্যায় তারুণ্যের উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।