পশ্চিম গুজরার খোকন বড়ুয়া
শফিউল আলম, রাউজান :
প্রবাসে ৭ বছর চেষ্টা করেও সফল হতে পারছিলেন না খোকন বড়ুয়া (৪০)। পরে দেশে ফিরেও বেকার ছিলেন ৭ বছর। অবসর সময়গুলোতে ইউটিউবে ভিডিও দেখে আগ্রহী হন নানা ধরনের কৃষি চাষের। তাতে সফলতা আসে। এরমধ্যে গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ১৫ হাজার টাকায় ৩৩ শতক পরিত্যক্ত জমি বর্গা নিয়ে মোট ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেন পেঁপে চাষ। ৬ থেকে ৭ মাসের মাথায় ফলন এসে ভরে যায় তাঁর বাগান। এখন তাঁর রোপন করা ৪শ গাছের মধ্যে সাড়ে ৩শ গাছে ঝুলছে পেঁপে। প্রতিটি গাছে বড়, ছোট ও মাঝারি মিলে ১ মন করে পেঁপে আছে এখন। মোট সাড়ে ৩শ মন পেঁপে ঝুলে আছে তাঁর বাগানে। এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার উপরে তিনি পেঁপে বিক্রি করেছেন। তাঁর আশা খরচ বাদ দিয়ে প্রথম ধাপের ফলনে তিন লাখ টাকার মত লাভ হবে তাঁর। এটি পেঁপে চাষে আলোর মুখ দেখা চট্টগ্রামের রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের বৈদ্য পাড়া গ্রামের খোকন বড়ুয়ার সফলতার গল্প। খোকন বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, তিনি গত ২০০০ সালে তরুণ বয়সে জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে যান। সেখানে শ্রমিকের কাজ করে সফল হতে না পেরে ৭ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। এরপর দীর্ঘদিন দেশেও বেকার ছিলেন। অবসর সময়ে ইউটিউবে কৃষি চাষের ভিডিও দেখে তিনি রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করেন। গত ২ থেকে ৩ মাস পেঁপের ফলন পাচ্ছেন তিনি। ৫০ মনের উপরে পেঁপে বিক্রি করে এ পর্যন্ত আয় করেছেন ৫০ হাজার টাকা। এখন তাঁর বাগানে ঝুলছে সাড়ে ৩০০ মন পরিপূর্ণ পেঁপে। এছাড়া তিনি করেছেন কলা বাগানও। করেন মৌসুমী ধান ও সবজি চাষ। তিনি জানান পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফটিকছড়ির ধর্মপুরের একটি নার্সারি থেকে রেড লেডি জাতের চারা সংগ্রহ করে গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ১৫ হাজার টাকায় ৩৩ শতক পরিত্যক্ত জমি বর্গা নিয়ে মোট ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেন পেঁপে চাষ। এ পেঁপের চারা লাগানোর চার-পাঁচ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং সাত মাস পর ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি পেঁপে দেড় থেকে দুই কেজি ওজন হয়। পেঁপে গাছ একটানা তিন দফায় দুই বছর ভালো ফলন দেয়। খোকন বড়ুয়া এক ছেলে সন্তানের জনক। প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের উপজেলার বাজার থেকে পাইকার ক্রেতারা এসে তারঁ বাগানের পেঁপে কিনে নিয়ে যান।পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরান হোসাইন বলেন, চাষাবাদ হতোনা এমন জমিতে প্রথমবার রেড লেডি জাতের পেঁপের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন খোকন বড়ুয়া। শুরু থেকে তাঁকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। তবে মোজাইক নামক একটি ভাইরাস তাঁর বাগানে আক্রমণ করলেও তাঁদের চেষ্টায় তা কাটিয়ে উঠতে পারায় ভালো ফলন হয়েছে।উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ জাতের পেঁপের প্রতিটি গাছেই ফলন হয়। পেঁপেও ধরে দেশি জাতের চেয়ে বেশি। স্বাদ ও গন্ধ ভালো বলে বাজারে এই পেঁপের চাহিদা রয়েছে। এই জাতের পেঁপেগুলো বেশ বড় হয়। এক একটি ফলের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি হয়। এ জাতের পেঁপে পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেন্টিমিটার হলে ফল ধরা শুরু হয়। এই জাতের পেঁপের রোগ সহ্য করারও ক্ষমতা আছে। গত শনিবার দুপুরে বাড়ির অল্প দুরত্বে উপজেলার শফিকুল ইসলাম চৌধুরী সড়কের সঙ্গে লাগোয়া খোখন বড়ুয়ার পেঁপে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ণবয়স্ক প্রায় প্রতিটি গাছেই ফলন এসেছে। চারদিকে থোকায় থোকায় লটকে আছে পেঁপে। খোকন বড়য়া জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে ২৭ একর জমিতে ৪০০ পেঁপের চারা লাগিয়েছিলেন তিনি। চারা লাগানোর ছয়-থেকে সাত মাসের মধ্যে প্রায় সব গাছেই ফলন এসেছে। রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমদ বলেন, এটি উপজেলার সব চেয়ে বড় পেঁপে বাগান। রেড লেডি জাতের পেঁপে স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়। যাঁরা এ পেঁপের চাষ করছেন তাঁদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।