চবিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেই কার্যকর ব্যবস্থা

সোহেল রানা, চবি »

সারাদেশে এডিস মশার আক্রমণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন কেউ না কেউ। হাটহাজারী উপজেলাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১১১ জন। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে হাটহাজারীর অদূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসও। তবে এই ক্যাম্পাসে এডিস মশার বিস্তার রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি আবাসিক হল ও আশপাশের মেস-কটেজগুলোতে প্রায় ১২ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। মশার অত্যধিক উপদ্রবে ডেঙ্গু আক্রান্তের শঙ্কায় দিন কাটছে এসব শিক্ষার্থীর।

আলাওল হলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন ইসলাম। গত ২০ জুলাই ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ নিয়ে গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় যান তিনি। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে ৫ আগস্ট ক্যাম্পাসে ফেরেন সুমন। তিনি বলেন, হলে দিনে ও রাতে মশার ব্যাপক উপদ্রব দেখা যায়। আশপাশের ড্রেনের ময়লা পানি ও অন্যান্য জায়গা থেকেই তা তৈরি হতে পারে বলে ধারণা তার। বৃহস্পতিবার সুমনের রুমমেট হাফিজুল আলমও জ্বর নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ড্রেনগুলোতে জমে আছে পচা পানি। হল ও অনুষদ ভবনের অনেক টয়লেটে যত্রতত্র ময়লা পানিতে সয়লাব। আইন অনুষদের পেছনে ও কেন্দ্রীয় মাঠের নিচু জমিতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এছাড়া স্টেশন চত্বর, জিরো পয়েন্ট, লেডিস ঝুপড়ি, কলা ঝুপড়িসহ অন্যান্য জায়গায় যত্রতত্র ফেলে রাখা ময়লার স্তূপ থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। খাবারের দোকানগুলোর ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট থেকেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে মশা জন্মানোর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস এলাকার বাসিন্দা শাফিউল বাশার বলেন, মশার উপদ্রব চোখে পড়ার মতো। অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। বেশিরভাগ সাধারণ জ্বর হলেও ডেঙ্গু নিয়ে একটা আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। বিভিন্ন আবাসিক হল ও দুই নম্বর এলাকার কয়েকটি মেসের বাসিন্দাদের সাথে কথা বললে তারা একই কথা জানান।

কর্তৃপক্ষের এমন উদাসনীতায় ক্ষোভ জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা নেই কর্তাব্যক্তিদের। ক্যাম্পাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি না হলে তাদের টনক নড়বে না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যায় না। যেতে হয় হাটহাজারী সদর অথবা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অসুস্থ শরীরে এতো দৌঁড়ঝাপ না করে হল বা মেসে থাকা অনেক শিক্ষার্থীই পরিবারের কাছে চলে যান বলে জানান তারা।

ডেঙ্গু রোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তৎপরতা চোখে না পড়লেও সেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্দীপ্ত বাংলাদেশের উদ্যোগে মঙ্গলবার ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি হাসিবুল ইসলাম বলেন, পুরো ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব না হলেও বেশ কিছু হল, অনুষদ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্প্রে করা হয়েছে।

জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকান বলেন, ডেঙ্গু রোধে আমাদের প্রাথমিক পদক্ষেপ হওয়া উচিত সচেতনতা। ক্যাম্পাসে এর বিস্তার না ঘটলেও আমরা যারা বিভিন্ন কাজে শহরে বা ক্যাম্পাসের বাইরে যাই তাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কক্ষ বা বারান্দার ফুলের টব ও হলের আশেপাশের নিচু জায়গায় যেন পানি জমতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি আবাসিক এলাকার আশপাশের আগাছাও নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। একই কথা জানান প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া।

তিনি বলেন, আমাদের বিভাগের ৩ কীটতত্ত্ববিদের সাথে কথা হয়েছে। আমরা শিগগিরই একটি সেমিনারের আয়োজন করবো। যেন ক্যাম্পাসে এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা সচেতন হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান ডা. আবু তৈয়ব বলেন, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থী না পেলেও স্টাফ কয়েকজন এসেছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যারা জ্বর নিয়ে আসছেন তাদের বেশিরভাগই পরীক্ষার পর সাধারণ ভাইরাস জ্বর আক্রান্ত। তবে এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। আমরা সচেতনতামূলক লিফলেটের ব্যবস্থা করছি। কর্তৃপক্ষ সেটা প্রচারের ব্যবস্থা করবে।

চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ বলেন, আমি ইউএনও ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেছি বেশ কয়েকবার। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন ফগার মেশিন নষ্ট থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তবে তিনি আমার কাছে লোক চেয়েছেন, রোববার (আজ) ওষুধ স্প্রে করবে বলে জানিয়েছেন।