চট্টগ্রাম সিটিতে ‘ব্যয় সংকোচনের’ বাজেট

সুপ্রভাত ডেস্ক »

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রীর দেখানো পথে’ ব্যয় সংকোচন নীতি মেনে নতুন অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বাজেটের এই আকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি হলেও প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। খবর বিডিনিউজের।

গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সংশোধনে তা ১ হাজার ১৭৬ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। বুধবার বন্দর নগরীর আন্দরকিল্লায় সিটি করপোরেশনের পুরাতন নগর ভবনের কে বি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে নতুন অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা প্রস্তাবিত ব্যয়ের সমান। অর্থাৎ, কোনো ঘাটতির হিসাব রাখা হয়নি।

এর মধ্যে উন্নয়ন অনুদান খাত থেকে সর্ব্বোচ্চ ৮৯৪ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। হাল কর ও অভিকর খাতে ২২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে, যা দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ । আর বকেয়া কর খাতে ২২২ কোটি ৩৫ লাখ এবং অন্যান্য কর খাতে ১৯৩ কোটি টাকাই মূল আয়ের উৎস।

বিপরীতে প্রস্তাবিত বাজেটে সর্ব্বোচ্চ ৭৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে উন্নয়ন খাতে। দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যয় খাত বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক। এই খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

বাজেট অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যয় সংকোচন নীতি ঘোষণা করেছেন। তাই আমরা অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়েছি। বাজেট বাস্তবায়নের হার ৫৫ শতাংশ। নতুন অর্থ বছরেও তাই বাজেট গতবারের চেয়ে কম রেখেছি।

‘নিজস্ব আয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। সরকার থেকে আগের মত তেমন ‘থোক বরাদ্দ’ দেয়া হয় না। প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ পাই শুধু।’

আয় বাড়াতে বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- গতিশীল রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানির ওপর কর আরোপের অনুমতি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছি।

‘মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে সিসিসি কর/ফি আদায় করবে। তখন আর সরকারি বরাদ্দের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল বলেন, ‘আমরা ৮২টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫৫টা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি। এ সবই নগরবাসীর জন্য। দেশে আর কোনো সিটি করপোরেশন এত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে না।’

এসব খাতে সরকার থেকে তেমন বরাদ্দ না পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবু আমরা ভর্তুকি দিই। নগরবাসীর কথা ভেবে স্কুল-কলেজের বেতন ও চিকিৎসা সেবা ফি আমরা সাধ্যের মধ্যে রেখেছি।’

বর্ধিত গৃহকরের বিষয়ে মেয়র রেজাউল বলেন, ‘করদাতাদের নানাবিধ ও অর্থনৈতিক সমস্যা বিবেচনায় ধার্যকৃত মূল্যায়নের উপর আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য ছয়টি রিভিউ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। উক্ত বোর্ডে আমি নিজে উপস্থিত হয়ে গণশুনানির মাধ্যমে করদাতাদের চাহিদামত সহনীয় পর্যায়ে কর মূল্যায়ন করায় করদাতারা আগ্রহ নিয়ে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।

‘তারা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করছেন। এতে নগরবাসীর গৃহকর নিয়ে যে অসন্তোষ ছিল তা প্রশমিত হয়েছে।’

গত অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার। সংশোধনে তা হয়েছে ১ হাজার ১৭৬ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। সে হিসেবে বিদায়ী অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৫৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।

আগের অর্থবছরে উন্নয়ন অনুদান খাতে ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৬৪১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা বকেয়া কর আদায়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া ২১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা হাল কর ও অভিকর আদায়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আয় হয়েছে ১৫২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

গত বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল উন্নয়ন কাজে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৬০৯ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক খাতে ২৭১ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা।

লিখিত বক্তব্যে মেয়র আড়াই হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর সড়ক উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি, বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা, বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, সড়কবাতি আধুনিকায়ন, পরিচ্ছনতাকর্মীদের জন্য ভবন নির্মাণ প্রকল্পসহ চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করছে সিডিএ, সেই কাজ শেষ হলে এবং বাড়ইপাড়া খালের কাজ শেষ হলে অনেকটা মুক্তি পাব। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাইরে নতুন করে ২২টি খাল মুক্ত করতে প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি। সেগুলোর অনুমোদন পেলে দখলমুক্ত ও সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারব।’

বন্দর নগরীতে মশার উপদ্রবের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘মশক নিধনের জন্য আলাদা কোনো বিভাগ আগে ছিল না। আমরাই প্রথম করেছি। মশক নিধন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। মশামুক্ত নগরী করতে চেষ্টা করছি। এ খাতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।’

একসময় পরিচ্ছন্নতার জন্য চট্টগ্রাম সিটিকে ‘আদর্শ’ বলা হত, কিন্তু এখন পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে রাজশাহীর নাম আসে; এই বিষয়টিতে মেয়রের জোর দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা, জানতে চান এক সাংবাদিক।

জবাবে মেয়র বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভোটার ৫ লাখ। আর চট্টগ্রামে ৭০ লাখ মানুষের বাস। পরিষ্কার করার পর আবার ডাস্টবিন, সড়ক, নালা ও খালে ময়লা ফেলা হচ্ছে। নগরবাসী সচেতন না হলে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা খুব কঠিন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে আমরা কাজ করছি।’
বাজেট অধিবেশনে সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম, স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইলসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।