-
কৃষিতে বিরূপ প্রভাব
-
পুকুর হচ্ছে চাষের জমি
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বির্স্তীণ জনপদে পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা জেলা প্রশাসনের কোনধরণের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে সংরক্ষিত বনের পাহাড় টিলা কেটে এবং আবাদি জমির শ্রেণি পরিবর্তনে চলছে মাটি লুটের মহোৎসব। সরকারি দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছেন অথবা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এইধরনের একাধিক চক্র উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে কয়েক মাস ধরে নির্বিচারে পাহাড় কেটে এবং চাষের জমি কেটে অন্তত শতকোটি টাকার মাটি লুটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশ সচেতনমহল। অভিযোগ উঠেছে, পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের লোকজন যেন নীরব দর্শক। দেখার যেন কেউ নেই। এতে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বেহাত হয়ে যাচ্ছে সরকারি বেসুমার ভূ-সম্পদ।অপরদিকে বর্তমানে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাশে বগাচতর এলাকায় প্রভাবশালী চক্র মালিকদের কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে লুটে নিচ্ছে। তাতে আবাদি জমি শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে পুকুরে পরিণত হচ্ছে। এই অবস্থায় মাটি লুটের আশপাশের অন্তত দুইশ একর চাষের জমি ভেঙে ছড়াখালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে চাষের জমি রক্ষা করতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন ভুক্তভোগী জমি মালিক ও চাষিরা। ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাচতর এলাকার জমি মালিকরা অভিযোগ তুলেছেন, কয়েকমাস ধরে মাইনুল হক ও রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহল কয়েকজনের কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে জমির শে্িরণ পরিবর্তন করে মাটি কেটে লুটে নিচ্ছে। শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার কারণে ওই এলাকার আবাদি জমি বর্তমানে পুকুরে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ভুক্তভোগী জমি মালিক আবুল কাশেম, নেজাম উদ্দিন, দেলোয়ার সওদাগর, চুন্নু মিয়া, নুরুল ইসলাম মাস্টার, মাহাবুব আলমসহ অনেকে দাবি করেন, তাদের জমির আশপাশ থেকে শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নেয়ার কারণে বগাচতর এলাকার অন্তত দুইশ একর চাষের জমি হুমকিতে পড়েছে। জানা গেছে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় বনবিভাগের পাহাড় টিলা কেটে এবং পাশের বগাচতর এলাকায় চাষের জমি কেটে মাটি লুটের ঘটনার সত্যতাও পেয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসংলগ্ন পাহাড় কেটে কতিপয় ভূমিদস্যু মাটি লুট করার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পরে জব্দকৃত দুইটি গাড়িকে একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জড়িতরা মুচলেকাও দিয়েছেন, সেখান থেকে আর মাটি কাটবেনা মর্মে। জরিমানা দেয়ার পর আবারও উল্লেখিত বগাচতর এলাকায় পাহাড় ও চাষের জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে জানালে ইউএনও বলেন, যদি এইধরণের ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আবারও জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে বনবিভাগের শুদ্ধি অভিযান চলছে জানিয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, এখন আমাদের এরিয়ায় কোনধরণের পাহাড় কাটা নেই। অবশ্য আগে কয়েকটি এলাকায় পাহাড় কাটা হলেও সেই ঘটনায় ইতোমধ্যে বনবিভাগের পক্ষ থেকে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড় এবং চাষের জমি কাটার জন্য কাউকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। যেখানে পাহাড় কাটা ও জমির শে্িরণ পরিবর্তন করার ঘটনা একটি বেআইনি কাজ, সেখানে অনুমোদন পাবে কী ভাবে। তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকট। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।