ভালো উৎপাদনে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ন জমিতে এবছর শীতকালীন সবজি চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এবং ক্ষেতে রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব না থাকার কারণে অতীত বছরের তুলনায় এবার রকমারি সবজি চাষে আশাতীত সাফল্য সৃষ্টি হয়েছে। শীতের শুরুতে আগাম ফলন হওয়ায় ভালো দাম পেয়েছে কৃষকরা। শুধুমাত্র গেল নভেম্বর-ডিসেম্বর দুইমাসে উপজেলার অন্তত সাত হাজার সবজি চাষি ক্ষেতের ফসল বিক্রি করে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা আয় করেছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এখনো মাঠজুড়ে সবজি ক্ষেতের সবুজ সমারোহ বিদ্যমান রয়েছে। ক্ষেতে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বেগুন, টমেটো, বরবটি, ঢেড়স, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, মরিচ, মুলা, ফুলকপি, বাধাকপি ছাড়াও শীতকালীন বিভিন্ন ধরণের সবজি। বিশেষ করে উপজেলার বুকচিরে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীর দুইতীরে এবছর সবজি চাষে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটেছে। কৃষকেরা বলেছেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মিশ্র চাষের প্রচলন দীর্ঘদিন থেকে। পাহাড়ে যেমন জুম চাষে হরেক রকমের ফসল হয়। তেমনি মিশ্র চাষেও আবাদ হয় হরেক রকম সবজির। চলতি মৌসুমের শেষ দিকের হালকা নিন্মচাপ এখানকার মিশ্র ক্ষেতের ফসলে অভাবনীয় উর্বরতার যোগান দিয়েছে। মৌসুমের শুরুতে পাহাড়ি ঢলে কোন কোন এলাকায় ফসলহানি হয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা নতুন মাটিতে নতুন করে আবাদ করার পর বিস্ময়ে হতবাক প্রান্তিক চাষীরা। তারা দেখছেন, সবজি ক্ষেতে অন্যরকম চিত্র। কোনরকম সার ছাড়াই বেড়ে যাচ্ছে গাছ। নির্ধারিত সময়ে ধরতে শুরু করেছে ফলন। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেন, শাকসবজির ভান্ডার হিসেবে পরিচিত চকরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে এবছর শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে ৬ হাজার হেক্টর (১৫ হাজার একর) জমিতে সবজি চাষ করার তথ্য থাকলেও অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, চাষের পরিধি আরো বাড়তে পারে। তিনি বলেন, আবাদি জমি ছাড়াও এবছর মাতামুহুরী নদীর দুইতীরে জেগেউঠো চরে রকমারি সবজি চাষ করেছেন কৃষকেরা। দুইমাস আগে থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শীতকালীন সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে বেগুন, বরবটি, ঢেড়স, শসা, ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কচু, ঘিমা কলমি, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ডাটা, লালশাক, ধুন্দুল, পুঁইশাক ও পাটশাকের ব্যাপক আবাদ হয়েছে।চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মো.মহিউদ্দিন বলেন, অতীত বছরে ভারি বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে বন্যার ধকল থাকতো। এতে সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গিয়ে চাষের ব্যাপক ক্ষতি হতো। আশার কথা হচ্ছে, এবছর বৈরী আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং ক্ষেতে রোগ-বালাই না থাকার কারণে শীতকালীন সবজিরও বাম্পার ফলন হয়েছে।কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, শীতকালীন সমজি চাষের শুরুতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের সবজি চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। গেল নভেম্বর মাসে হালকা নিন্মচাপে কিছু কিছু এলাকায় ফসল নষ্ট হয়। ওইসব এলাকায় কৃষকদের মাঝে সরকারিভাবে বিনামুল্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। তাই সরকারি সহায়তা পেয়ে কৃষকেরা আশা জাগানিয়া সবজির আবাদ করেছেন।