আতঙ্কে ১০ হাজার ভূমিহীন পরিবার
নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :
উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশ থাকার পরও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা এবং অবহেলার কারণে পুর্বপুরুষের মালিকানাধীন চিংড়িজোনের সম্পত্তি দখল বুঝে পাচ্ছেনা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি লিমিটেড। উল্টো বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী দখলবাজ চক্রের সঙ্গে আতাঁত করে সরকারি কর্মকর্তারা আদালতের আদেশ লঙ্ঘনের মাধ্যমে চিংড়িজমি অবৈধ দখলের সুযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আদালতের আদেশ লঙ্ঘনের মাধ্যমে অনিয়মে অভিযোগে সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন সমিতির সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন। আর অনিয়মের ঘটনাকে আঁড়াল করতে দখলবাজ চক্রের সক্রিয় সদস্যরা এবার চিংড়ি প্রজেক্টে বঙ্গবন্ধু কলোনি অপবাদ রটিয়ে পুর্বপুরুষের মালিকানাধীন চিংড়িজমি থেকে বিনা নোটিশে রামপুর সমিতিকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের ফের উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছেন সমিতির সভ্য- পোষ্য অন্তত ১০ হাজার পরিবার। চকরিয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে রামপুর সমিতির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন মেহেরুজ্জামান ও মিজান গংদের নানা অপকর্ম অনিয়ম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রামপুর চিংড়িজোনে বঙ্গবন্ধু কলোনি প্রাচীন একটি জনপদ। ২০১৩ সালের ১৮জুন স্বরাস্ট্্র মন্ত্রাণালয়ের পুলিশ শাখা-৩ থেকে আদেশ জারির মাধ্যমে রামপুর এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁিড় স্থাপন করা হয়। ওই তারিখে মন্ত্রাণালয়ের ইস্যুকৃত ৩৯০ নম্বর স্মারকে একটি চিঠি রামপুর সমিতির প্রয়াত সভাপতি শামসুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে পুলিশ ফাঁিড়টির স্থান চকরিয়া থানার বদরখালী এলাকার রামপুর সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতি লিমিটেড এবং পাশের বঙ্গবন্ধু কলোনী নামে খ্যাত অফিস সংলগ্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুলত মেহেরুজ্জামান গং কল্পকাহিনী সাজিয়ে রামপুর সমিতির চিংড়িজমি জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। শহীদুল ইসলাম লিটন অভিযোগ করে বলেন, রামপুর মৌজার ৫হাজার ১শ ১২ একর চিংড়ি জমি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসাজসে দীর্ঘদিন জবরদখলের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে মেহেরুজ্জামান গংয়ের নেতৃত্বে একটি চক্র। উল্লেখিত চিংড়িজমি রামপুর সমিতির পুর্বপুরুষের সম্পত্তি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি লিমিটেডের (রেজি. নম্বর ২৩৯৯/৭২(চট্ট) সভ্য- পোষ্য প্রায় ১০ হাজার ভুমিহীন পরিবার ৫০ বছর ধরে আইনি লড়াই করেও অনুকুলে বুঝে পাচ্ছেনা। এমনকি চিংড়িজমিসমুহ দখল বুঝিয়ে দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত রিট পিটিশন মামলার আদেশে নির্দেশনা দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা উপেক্ষা করে চলছেন। বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা চেয়ে গতবছর সমিতির সভাপতি আবু জাফর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে একটি লিখিত আবেদনও পাঠিয়েছেন।উল্লেখ্য যে, সমিতির পক্ষ থেকে ১৯৭৯ সালে উল্লেখিত জমি ফেরত পেতে আইনি লড়াই শুরু হয়। এরই আলোকে চট্টগ্রাম সাবজজ-২য় আদালতে একটি অপর মামলা (নম্বর৬৭/৭৯) দায়ের করা হয়। দীর্ঘশুনানি শেষে আদালত সমিতির সদস্যদেরকে উল্লেখিত জমিগুলো বন্দোবস্তী মূলে ফেরত দেয়ার অগ্রগামী বলে বিবেচিত হয় মর্মে রায় প্রদান করেন। কিন্তু মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে উক্ত জমি দখলে রাখার জন্য আদালতের আদেশকে অবমাননা করেন। চট্টগ্রাম সাবজজ-২য় আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় পরবর্তী দীর্ঘদিন বছর পর ২০১২ সালে সমিতি কর্তৃপক্ষ পুনরায় মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিটপিটিশন (নম্বর- ১০৯৬২/১২) দায়ের করেন। মামলার প্রথম শুনানিতে আদালতের বিজ্ঞ বিচারপতিগণ সমিতির দাবিকৃত জমির উপর কোন ইজারা নবায়ন না দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। কিন্তু আদালতের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মৎস্য কর্মকর্তারা উল্লেখিত জমি পুনরায় ইজারা নবায়ন দেন।
রামপুর সমিতির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন বলেন, সমিতির দায়েরি মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন নম্বর- ১০৯৬২/১২ পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ শুনানিক্রমে ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি আদালত আদেশে ভূমি সচিবকে দুইমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করে সমিতির সদস্যদেরকে জমিগুলো বুঝিয়ে দেয়ার জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করেন। সরকারি কর্মকর্তাগণ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরবর্তীতে দুই মাসের মধ্যে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সমিতির সদস্যগণের বসবাসকৃত জমি হতে উচ্ছেদ করতে শুরু করেন। এতে সমিতির সদস্যগণ পুনরায় হাইকোর্টে একটি কনটেম্পট পিটিশন (নম্বর ২৬১/১৭) দায়ের করলে আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রুল ইস্যু করেন। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মুলত নিজেদের সম্পদ উদ্ধারে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জমিগুলো ফেরত দিতে উচ্চ আদালতের আদেশ বারবার উপেক্ষিত হওয়ার কারণে সর্বশেষ মহামান্য হাইকোর্টে আবারও মৎস্য বিভাগের দাবীকে অবৈধ ঘোষণা করে সমিতির পক্ষথেকে আরো একটি রিট পিটিশন মামলা (নম্বর ৬০৪৭/১৭) দায়ের করা হয়।
মুলত দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক রামপুর সমিতি জমিগুলো ফেরত পেতে একটি পর্যায়ে পৌঁছলে ঠিক ওইসময়ে প্রশাসনের নজরদারি অন্যদিকে প্রভাবিত করতে দখলবাজ চক্রের সক্রিয় সদস্যরা চিংড়ি প্রজেক্টে বঙ্গবন্ধু কলোনি অপবাদ রটিয়ে পুর্বপুরুষের মালিকানাধীন চিংড়িজমি থেকে রামপুর সমিতিকে উচ্ছেদের পাঁয়তারায় মেতে উঠেছে।
সমিতির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন হুশিয়ারি দিয়েছেন, রামপুর সমিতির ১০ হাজার সভ্য-পোষ্য বেঁেচ থাকতে দখলবাজ চক্রের এই অপকৌশল কোনদিন সফল হতে দেবেনা। পুর্বপুরুষের সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনে জীবন দিতে রাজি সমিতির সদস্যরা।