জহির টিয়া :
এক বনে বাস করতো দুই ঘুঘু। তাদের কোনো বাচ্চা-কাচ্চা ছিল না। একে অন্যকে খুব ভালোবাসত। নিঃসন্তান হলেও তারা ছিল বেশ সুখি। একদিন পুরুষঘুঘুটা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তা দেখে স্ত্রী ঘুঘুটা খুব বিচলিত হয়ে গেল। কী করবে? কিছুই বুঝতে পারছিল না। হঠাৎ মনে পড়লো, দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বকের কথা। সে মোটামুটি ভালো চিকিৎসা দিতে পারে। তাই স্ত্রীঘুঘুটা ফুড়ুৎ করে ওড়ে বকের খোঁজে গেল। ওড়তে ওড়তে বনের শেষপ্রান্তে এক উঁচু টিলার ওপর বসলো। টিলার ওপাশেই ছিল একটা পুকুর। এই পুকুরে নাকি রাজা-রানি স্নান করত। পুকুরটার পাশেই নাকি বিশাল রাজপ্রাসাদ ছিল। যা এখন আর নেই। বহু পুরোনো কথা। বনের সকল পশুপাখির মুখে মুখে এসব কথা প্রচলিত। পুকুরটার আশপাশেই বকের বাসা। কিন্তু ঘুঘুটা সঠিক চেনে না, কোন্ বাসায় থাকে বকটা। তাই ঘুঘুটা ডাকতে লাগলো, ‘বকভাই, বকভাই ও বকভাই।’
ডাকাডাকি শুনে পাশের ঝোপ হতে বেরিয়ে এলো একটা নেকড়ে শেয়াল।
শেয়ালটা ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বললো, ‘কী হয়েছে? এতো চ্যাঁচামেচি করছো কেন? দিলে তো সক্কাল সক্কাল ঘুমটা নষ্ট করে।’
তখন ঘুঘুটা ভারাক্রান্ত মনে সব কথা শেয়ালকে খুলে বললো।
শুনে শেয়াল বললো, ‘আচ্ছা, চলো আমার সাথে। একটা গাছ দিচ্ছি।’
শেয়াল তার বাসা হতে কিছুদূরে গিয়ে একটা গাছের লতা ছিঁড়ে আনলো। লতাটি ঘুঘুটার হাত দিয়ে বললো, ‘এটা ওর ডান পাখনায় তিনদিন বেঁধে রাখবে। আশা করছি, শীঘ্রই এর ফলাফল পাবে। যার কাছে বেঁধে দিবে তাকে সে তিনদিন স্পর্শ করতে পারবে না। তাই তোমাদের আশপাশের কারো কাছে বেঁধে নেবে। এক্ষুণি গিয়ে বেঁধে দাও।’
ঘুঘুটা খুশি হয়ে কৃতজ্ঞতা জানালো শেয়ালটিকে।
তখন শেয়ালটা একটা বড় হাই তুলে বললো, ‘প্রথমে তোমাকে শিকার করে খাবো, ভেবেছিলাম। বড্ড খিদে পেয়েছিল। কিন্তু তোমার বিপদের কথা শোনে তা করতে পারিনি। সুযোগ পেলেই কারো ক্ষতি করতে নেই। বিপদে তোমাকে সাহায্য করতে পেরে আমারও বেশ ভালো লাগছে।’
ঘুঘুটা আবারও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলো। চিকিৎসা পেয়ে পুরুষঘুঘুটা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো। কয়েকদিন পর ঘুঘুজোড়া এলো শেয়ালের কাছে। তারপর পুরুষঘুঘুটা নত শিরে শেয়ালকে বললো, ‘আপনার এই উপকারের কথা কোনোদিন ভুলবো না। আপনি কোনোদিন বিপদে পড়লে আমরাও সাধ্যমতো চেষ্টা করবো উপকার করার।’ এ কথা শুনে শেয়াল মুচকি মুচকি হাসে। বলল, ‘তোমরা পুচকে পাখি, আমাকে কিসের সাহায্য করবে?’
‘মহাশয়, পারব কি-না জানি না। তবুও সুযোগ পেলে সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টা করবো।’ ঘুঘু দুইটা বলল।
প্রায় মাস ছয়েক পর। শেয়াল বনের মধ্যে শিকারের জন্য ঘোরাঘুরি করছিল। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা ঝোপের ভেতর গভীর গর্তে পড়ে গেল। গর্তের ভেতর পড়ে ছটফট করতে লাগল শেয়ালটি। কোনোভাবেই গর্ত হতে উঠতে পারলো না। সেই গর্তের ওপর দিয়ে ওড়ে যাচ্ছিল ঘুঘুজোড়া। শেয়ালের ছটফটানিতে তারা বুঝতে পারলো গর্তে কেউ আটকে পড়েছে। তাই তারা দেরি না করে গর্তের কিনারে এসে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে দেখে, সেই শেয়ালটি গর্তে পড়ে আছে। তারা শেয়ালটিকে বাঁচানোর জন্য বুদ্ধি বের করতে লাগল।
দেরি না করে পুরুষঘুঘুটি ওড়ে গিয়ে পাশের গ্রাম হতে একটা দড়ি সংগ্রহ করে আনলো। দড়ির একপ্রান্ত গাছের গোড়ার সাথে শক্ত করে প্যাঁচিয়ে বেঁধে দিলো। আরেক প্রান্ত শেয়ালকে ছুঁড়ে দিলো। শেয়াল দড়িটি ধরে ধীরে ধীরে ওঠে আসার চেষ্টা করতে লাগল এবং সফলও হলো। শেয়াল গর্তের ওপর এসে ঘুঘুজোড়ার কাছে কৃতজ্ঞতা জানালো। তারপর ঘুঘুজোড়াকে পিঠের ওপর বসিয়ে আনন্দ করতে করতে চলে গেল।























































