খোলা ড্রেন ও খালের পাড় দ্রুত সুরক্ষিত হওয়া জরুরি

নগরের চাক্তাই, রাজাখালী খাল ও চকবাজার ফুলতলা এলাকায় খালের পাড়ে কোনো রেলিং না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। ইতিমধ্যে এসব খালে পড়ে অনেকেই আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি এসব খাল এলাকায় কোনো সড়ক বাতির ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে রাতের বেলায় মাদকাসক্তদের আড্ডা বসছে এবং নানা ধরনের চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ।
আর বর্ষা মৌসুমে এসব স্থানে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। কারণ এ সময়ে জলমগ্ন রাস্তায় কোনো কিছু দৃশ্যমান না হওয়ায় রেলিংবিহীন খালে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার বহু নজির রয়েছে।
গতকাল সুপ্রভাত বাংলাদেশে প্রকাশিত ‘নগরের অরক্ষিত খাল : বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা, আলোর ব্যবস্থা নেই’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
খোলা ড্রেন ও অরক্ষিত খালে পড়ে দুর্ঘটনা-হতাহতের ঘটনার খবর ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এলেও দীর্ঘ সময়ে এক্ষেত্রে প্রতিকার মেলেনি পুরোপুরি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতের পাশের বিশাল ড্রেনগুলো এখনো খোলা ও অরক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এটাই বাস্তবতা।
নগরের মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত সড়কের একপাশে একটি প্রশস্ত ড্রেন এবং রাস্তার অপর পাশে একটি খাল (চশমা খাল) রয়েছে। বছর দুয়েক আগে এই খালটিতে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে এই খালের পানির তীব্র স্রোতে পিছলে পড়ে ডুবে যায় এক সবজি ব্যবসায়ী। তার খোঁজ মেলেনি এখনো।
২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় একই খালে পড়ে নিখোঁজ হওয়া এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার হয় ঘটনার ৩ দিন পর।
২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদ মোড়ে ড্রেনে পড়ে শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া নামে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী মারা যান।
২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা শহরের কালুরঘাট এলাকার ওসমানিয়া খাল থেকে এক নারীকে উদ্ধার করে। ২০২১ সালের ৩০ জুন ষোলশহরের চশমা পাহাড় এলাকায় একটি অটোরিকশা খালে পড়ে ৩ জন নিখোঁজ হয়। পরে চালক ও যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০১৮ সালের ৯ জুন নগরের আমিন জুট মিল এলাকায় এক শিশু ড্রেনে পড়ে যায়।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে ওজাইফা নামে ৩ বছরের একটি শিশু মারা যায়।
এভাবে নগরের অরক্ষিত খাল ও ড্রেনে পড়ে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, শহরে মোট ৫৭টি (১৬১ কিলোমিটার) খাল এবং ৭৬৫ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ২০২১ সালে ড্রেন, খাল ও ফুটপাথের ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোর ওপর জরিপ চালিয়েছে। জরিপের পর মোট ৫ হাজার ৫২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করে। স্পটগুলোর মোট আয়তন ছিল ১৯ কিলোমিটার।
সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে খোলা ড্রেনে স্ল্যাব স্থাপন এবং খালের পাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ হাজার বর্গফুট ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসানো হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ খালগুলোর মধ্যে ১৮ হাজার বর্গফুট এলাকায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
আমরা আশা করবো, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ খোলা ড্রেন ও খালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাকি কাজ জরুরি ভিত্তিতে অতি দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার উদ্যোগ নেবে।