খাতুনগঞ্জে পণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত

রমজানে সংকটের সম্ভাবনা কম

রাজিব শর্মা »

আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নগরীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আমদানি-সরবরাহ বাড়ায় কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে প্রায় পণ্যের দাম এখনও চড়া। এবার রমজানে কোনো ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

গতকাল খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে চাহিদাসম্পন্ন নিত্যপণ্য ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ভোজ্যতেল ও খেজুর আড়তে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ আমদানিকারকের পণ্য আড়তে ঢুকেছে। ছোলা ও ডালের দাম কিছুটা কমলেও অন্য পণ্যের দাম এখনো বাড়তি।

আড়তদাররা জানান, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার চাহিদার চেয়ে বেশি ছোলা আড়তে এসেছে। পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এবার রমজানে ছোলার সংকট হবে না। বরং অন্যান্য বছর রমজানে ছোলার দামটা চড়া থাকলেও এবার নাগালের মধ্যে থাকবে। ডাল, তেলও পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। অন্যান্যবার আড়তে বেশি ছোলা মজুদ হতো অস্ট্রেলিয়া ও মিয়ানমার থেকে। কিন্তু এবার বেশি ছোলা এসেছে ভারত থেকে। কিছু কানাডা, তিউনিশিয়ার ছোলাও রয়েছে। এবার বেশিরভাগ খেজুর আমদানি হয়েছে মিশর, আফ্রিকা এবং আরব আমিরাত থেকে। গতকাল পাইকারি বাজারে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ছোলা বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩২০ টাকা। অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮৮০ থেকে ৩ হাজার টাকা। চিনি মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৪০ থেকে ৪ হাজার ৩২০ টাকা। এ ছাড়া পাম তেল মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। সয়াবিন তেল মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৭২০ থেকে ৬ হাজার ৮০০ টাকা। ভারতের পেঁয়াজ মণপ্রতি ১ হাজার ৩২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। বাজারে চীনা আদার সংকট থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ থাইল্যান্ড ও দেশি আদা মজুদ রয়েছে। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার আদা মণপ্রতি ৫ হাজার ও মায়ানমারের আদা ৪ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। চাষের দেশি আদা মণপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খেজুর মানভেদে প্রতি প্যাকেট (১ প্যাকেটে ১০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ছোলা, খেজুর, চিনি, তেলসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি রয়েছে।

খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নেতা এসএম মহিউদ্দিন বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ছোলা, ডাল, খেজুর রয়েছে। যারা এলসি (্ঋণপত্র) করেছেন, তাদের পণ্যও প্রায় আড়তে চলে এসেছে। এবার রমজানে দাম বাড়ার কোন ধরনের সম্ভাবনা নেই। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলাসহ সকল ধরনের ডালে গড়ে মণপ্রতি ৪০০ টাকা করে কমেছে। অন্যান্যবার মায়ানমার ও অস্ট্রোলিয়ার ছোলার চাহিদা ভালো থাকত। এবার বেনাপোল দিয়ে পর্যাপ্ত ভারতীয় ছোলা আসাতেই অস্ট্রেলিয়ার ছোলার তেমন চাহিদা নেই।

খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে আড়তে পর্যাপ্ত দেশি ও আমদানি পেঁয়াজ, আদা, রসুন মজুদ রয়েছে। রমজানে সংকট বা দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য ব্যবসায়ীরা মজুদ করেছেন। কাজেই এবার চাল, ডাল, ছোলা ও তেলের দাম বাড়বে না। তাছাড়া যে পরিমাণ পণ্য মজুদ হয়েছে তা দিয়ে রমজানের পর আরও দুইমাস নিশ্চিত থাকা যাবে।

চাক্তাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, ‘এবার বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোন আশংকা নেই। আজকে (মঙ্গলবার) সর্বোচ্চ ৩৩ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। রমজানে সর্বোচ্চ কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম অনুযায়ী দেশের বাজারে রোজার পণ্যের দাম আরও কম হওয়া উচিত। মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে তদারকি জোরদার করা উচিত।’

এদিকে, রমজানের আগে চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জ এসে ভোগ্যপণ্য কিনে নেন। তবে এবার বেচাকেনা নিয়ে হতাশ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। তারা জানান, মানুষের ক্ষয়ক্ষমতা কমার কারণে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বিক্রি কমেছে।