কোভিডের নতুন ভারতীয় ভেরিয়েন্ট নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা দরকার

কোভিড-১৯ এর কালোছায়া থেকে পৃথিবী বুঝি আর অচিরকালের মধ্যে নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। পৃথিবী বিগত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে এমন সর্বগ্রাসী বিপদের মুখে পড়েছে, এমনটি জানা যায় না। যুদ্ধবিগ্রহ, খাদ্যসংকট, অর্থনৈতিক মন্দা প্রভৃতি পরিদৃষ্ট হলেও তা ছিল নির্দিষ্ট দেশ বা ভূখ-ের বলয়ে।
গত ২০২০ সালের প্রারম্ভ থেকে বিশ্ব এমন দুর্যোগে পতিত হয়েছে, যার সমাধানের কোনো সহজ পন্থাও উদ্ভাবন সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিকে চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনার শ্লথগতির সামান্য সুবাতাস পরিলক্ষিত হলে কিঞ্চিৎ স্বস্তির আভাস দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা আবার ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে তার আগ্রাসীরূপ নিয়ে। সরকার ও সচেতনমহলের সকল আশাবাদকে ধূলিস্যাৎ করে করোনার ভয়ঙ্কর থাবা মানুষের উদ্যম ও গতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে আবার। এক্ষেত্রে যে-উদ্যোগটি প্রত্যাশার বলিষ্ঠ দীপ জ্বালিয়ে রেখেছিল, তা হলো করোনা ভ্যাকসিন আমদানি ও তা প্রয়োগের উদ্যোগ।
সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এই ভ্যাকসিন এ পর্যন্ত ৭৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬১ জনকে প্রদান করা গেছে। ভারত থেকে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে মোট ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। সেই হিসেবে এখন মজুত আছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৯ ডোজ মাত্র। তাও মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ মজুত ফুরিয়ে যাবে।
অন্যদিকে ভারত সরকারও স্বল্পকালের মধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহে অনেকটাই অপারগতা প্রকাশ করায় এ ক্ষেত্রে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঞ্চার হয়েছে বিপুল মাত্রায়। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ভারতেও আশঙ্কাজনকহারে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ছড়াচ্ছে ভয়াবহ গতিতে। ্এখানে ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে। এই ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশেও প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। যদি এ ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে ঢুকেই পড়ে তাহলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ওটাকে সামাল দিতে প্রস্তুত নয় বলে শঙ্কা তাদের।
এ অবস্থায় একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখা দরকার বলে জানিয়েছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির প্রধান। তাঁর সুপারিশ দ্রুতই সরকারকে জানানো হবে বলে জানা গেছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে নানা ঝুঁকি নানাভাবে পরিলক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও গতকাল থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়া হয়েছে।
গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচলের বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। লকডাউনে দোকানপাট, শপিংমল খুলে দেয়ায় আবারও সংক্রমণ বাড়বে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত তদারকি না থাকলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। এছাড়া মাস্ক পরিধানের ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে, এ ব্যাপারে কোনো শৈথিল্যই কাক্সিক্ষত হতে পারে না।
এদিকে চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় চারজন করোনা রোগী মারা গেছে। এ নিয়ে চলতি মাসের ২৪ দিনে ৯৭ মৃত্যুসহ চট্টগ্রামে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৮৬জন। অন্যদিকে দেশওয়ারি মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮৩জন। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৬৯৭জন। গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে গত একদিনে মারা যাওয়া ৮৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ১০ হাজার ৯৫২ জনের মৃত্যু হলো।