এক কিটে দুই নমুনা পরীক্ষা !

পরীক্ষার ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়বে না: ল্যাব প্রধানগণ#
সঙ্কট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে দেড় লাখ করোনা কিট মজুদ রয়েছে#

ভূঁইয়া নজরুল :
করোনা পরীক্ষায় একটি নমুনার জন্য আগে একটি কিট ব্যবহার হতো। তবে এখন থেকে এক কিট দিয়ে দুটো নমুনা পরীক্ষা করা হবে। মৌখিকভাবে এধরনের একটি নির্দেশনা করোনা পরীক্ষায় নিয়োজিত ল্যাব প্রধানদের গত সোমবার দেয়া হয়েছে। করোনা পরীক্ষায় নিয়োজিত চট্টগ্রাম ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজসহ দেশের অন্য ল্যাবগুলোর কোথাও এই পদ্ধতি শুরু হয়েছে আবার কোথাও শুরুর প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ল্যাবগুলোতে কোনো লিখিত নির্দেশনা আসেনি। তবে করোনা পরীক্ষায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়কের পক্ষ থেকে একটি কিট দিয়ে দুটো নমুনা পরীক্ষা জন্য একটি মৌখিক গাইড লাইন দেয়া হয়েছে। সেই গাইড লাইন অনুসারে ইতিমধ্যে মঙ্গলবার থেকে তা শুরু হয়ে গেছে। এবিষয়ে চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষায় মডেল হিসেবে বিবেচিত ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাবের প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এধরনের একটি গাইড লাইন আমরা পেয়েছি।’
একটা কিট দিয়ে দুটো পরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা তা শুরু করেছি। ঢাকার বিভিন্ন ল্যাবসহ আমরা সকলেই এখন থেকে একটি কিট দিয়ে দুটো নমুনার পরীক্ষা করবো।’
পরীক্ষার মান ঠিক থাকবে?
‘একটি কিট দিয়ে দুটো নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি আগে আমরা বিআইটিআইডি ল্যাব পরীক্ষা করেছি। একইসাথে একই নমুনা একটি কিট দিয়েও পরীক্ষা করে পাশাপাশি মিলিয়ে দেখেছি, ফলাফল একই পাওয়া যাচ্ছে’ -জানালেন বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ। একই মন্তব্য করেন ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবের প্রধান প্রফেসর ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমরার ইতিমধ্যে একটি কিট দিয়ে দুটো নমুনার পরীক্ষা শুরু করেছি। এতে ফলাফলে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর তা সফল হওয়ায় আর্থিকভাবে দেশ সাশ্রয় হবে।
এদিকে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়–য়া বলেন, ‘কিট সঙ্কটের কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি কিট দিয়ে দুটো নমুনা পরীক্ষা করে আসছি। এতে পরীক্ষার ফলাফলে কোনো পরিবর্তন হয় না।’

এক কিট দিয়ে দুই পরীক্ষা কীভাবে?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে এখনো এক কিট দিয়ে দুটো নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়নি। তবে শিগগিরই শুরু করা লাগতে পারে। এজন্য ল্যাবের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। কীভাবে এক কিট দিয়ে দুটো নমুনা পরীক্ষা হবে জানতে চাইলে ল্যাবের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রফেসর মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে নির্দেশিত নীতিমালা অনুযায়ী আমরা একটি কিটের ৩০ মাইক্রো লিটার রি এজেন্টের সাথে ২০ মাইক্রোলিটার সোয়াবের (রোগীর কাছ থেকে যে নমুনা আসে) মিশ্রণ করে পরীক্ষা করে থাকি। এই মিশ্রণ পিসিআর মেশিনে দিলে আমরা করোনার ফলাফল পেয়ে যাই। তবে এখন হয়তো এই মিশ্রণে পরিবর্তন আসবে। আগে ৫০ মাইক্রোলিটারের মিশ্রণ হলেও এখন হবে ২৫ মাইক্রোলিটারের মিশ্রণ।’
মিশ্রণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইতিমধ্যে পরীক্ষা শুরু করে দেয়া ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের প্রধান প্রফেসর ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, ‘এখন আমরা ৩০ মাইক্রোলিটার রি এজেন্টের পরিবর্তে ১৫ মাইক্রোলিটার এবং ২০ মাইক্রোলিটার সোয়াবের পরিবর্তে ১০ মাইক্রোলিটার নেয়া হবে। তখন দুটো একসাথে মিশিয়ে পিসিআর মেশিনে দিলে ফলাফল পাওয়া যাবে। এতে আমাদের অনেক রিএজেন্ট সাশ্রয় হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বক্তব্য
সারাদেশের করোনা পরীক্ষার বিষয়টি সমন্বয় করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ডা. সানিয়া তাহমিনা। কিটের মজুদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেড় লাখ কিট মজুদ রয়েছে। তবে যেহেতু বিদেশ থেকে এসব কিট আমদানি করতে হয়, আবার যে দেশ থেকে আমদানি করা হবে তারাও নিজেদেরটা রেখে অবশিষ্ট থাকলে আমাদের কাছে রপ্তানি করে। তাই আমরা চাইলেই কিট পাব না। এটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। তবে বিদ্যমান কিটগুলোকে কীভাবে সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ফলাফল দেয়া যায় আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’
উল্লেখ্য, দেশের ৬৫টি ল্যাবে প্রতিদিন ১৮ হাজার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে মজুদ থাকা দেড় লাখ কিট দিয়ে বেশিদিন চলা যাবে না।