একটি সেতুর জন্য…

প্রতিবছর বর্ষায় ভেসে যায়, শুষ্ক মৌসুমে তৈরি করা হয় সাঁকো

মো. জাহেদ হোসাইন, সাতকানিয়া »

সাতকানিয়ায় বুড়াইছড়ি খালের উপর একটি সেতুর অভাবে কয়েক গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঞ্চনা হাজারিখীল এলাকায় বুড়াইছড়ি খালের অবস্থান। স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে একটি সাঁকো নির্মাণ করে কোন রকমে পারাপার হলেও বর্ষার মৌসুমে তা পাহাড়ি ঢলে ভেসে নিয়ে যায়। নড়বড়ে এ সাঁকো দিয়ে প্রতিনিয়ত স্থানীয় জনসাধারণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। কাজেই যে কোন সময় ঘটতে পারে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনা।

ওই এলাকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীকে এ সাঁকো পারাপার হতে বিধায় বহু শিশুশিক্ষার্থীকে অভিভাবকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান না। আবার অনেক শিশুশিক্ষার্থী নড়বড়ে সাঁকো পারাপারের ভয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিমুখ হয়ে ঝরে পড়ার তালিকায় যুক্ত করছে। তারপরও জীবনের তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে নিত্য যাতায়াত করছে এলাকাবাসী।

দেশ স্বাধীন পূর্ব থেকে এলাকাবাসী ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা বুড়াইছড়ি খালের উপর সেতু নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছেন না- এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

জানা যায়, পুরনো রামপুর-ডিসি সড়কের দ্বিখ- রেখা হিসেবে বুড়াইছড়ি খাল প্রবাহিত হয়েছে। দক্ষিণ কাঞ্চনা হাজারিখীল এলাকায় অবস্থিত কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আড়াই’শ পরিবারের সহ¯্রাধিক লোক ও এলাকার কৃষক প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করে। তাছাড়া ওই এলাকার কাঞ্চনা আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, দারুল এহসান দাখিল মাদ্রাসা, এন আই চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও সংযুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহ রশিদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঞ্চনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কাঞ্চনা এ কে বি সি ঘোষ ইনস্টিটিউটসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রামপুর ডিসি সড়কেই অবস্থানের কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে ওই সাঁকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

এছাড়া খালের উভয় তীরের ফসলি জমিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ সাঁকো পার করেই উপজেলা সদরসহ দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে এ নড়বড়ে সাঁকো যখন ভেসে যায় তখন জমির উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরবরাহ তো দূরের কথা, জমিতে পঁচে যায়। ফলে এলাকার গবির কৃষকদের টানতে হয় লোকসানের ঘানি।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ ও কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করছে। বাঁশের সাঁকোটি বর্তমানে এমনই নড়বড়ে অবস্থা যে চলাচল করতে গিয়ে যেকোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী বদিউল আলম, নুরুল আলম ও ছগির আহমদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, পাকিস্তান আমলে ওই স্থানে ব্রিক পিলারের উপর লোহার পাটাতন দিয়ে একটি সেতু নির্মিত হয়েছিল। সেতুটি পাহাড়ি ঢলের প্রবল ¯্রােতের কারণে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর থেকে এলাকাবাসীর চাাঁদার টাকায় প্রতিবছর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় সাঁকো। তা বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে ভেসে নিয়ে যায়। পরবর্তী বছর শুষ্ক মৌসূম শুরুর আগে পুনরায় সাাঁকো নির্মাণ কিংবা ভাঙা সাঁকো মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হয়। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।

তারা আরো বলেন, হাজারিখীলের এ সাঁকোটি দিয়ে কাঞ্চনা মনুফকিরহাট, মাদার্শার দেওদীঘি, মক্কাবাড়ি হয়ে রামপুর-ডিসি সড়কটি পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। বর্তমানে এ সড়কটি রামপুর-ডিসি সড়ক হিসেবে পরিচিত হলেও খতিয়ানে এ সড়কের পুরানো নাম জয় মঙ্গল সড়ক। বুড়াইছড়ি খালের এ স্থানে একটি সেতু নির্মিত হলে যোগাযাগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি উপকৃত হতো সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার বহু কৃষক। দুর্ভোগ কমতো শিক্ষার্থীসহ আশপাশের ইউনিয়নসহ দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের।

এ ব্যাপারে কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান আলী বলেন, একটি সেতুর অভাবে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সেতুটি নির্মাণ হলে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার মধ্যে কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সেতুবন্ধন তৈরি হতো। সেতুটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনেকবার ধরণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।

এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সারওয়ার হোসেন বলেন, হাজারিখীল এলাকার বুড়াইছড়ি খালের উপর সেতু নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিটি’তে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।