রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদে শত শত এনজিওর ব্যবহৃত যানবাহনের ঠেলায় ক্ষতবিক্ষত কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কপথ দীর্ঘ আড়াই বছরেও দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। বর্ষাকালে ঠিকাদারের এলোপাতাড়ি খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কটি এখন চাষাবাদের জমিতে পরিণত হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা অসহনীয় যানজট ও সাধারণ পথচারীর অন্তহীন দুর্ভোগ দেখা কেউ নেই। দায়িত্বরত ঠিকাদাররা বলছেন, বৃষ্টি কমলে কাজ শেষ হবে। স্থানীয় জন সাধারণের দাবি সড়কে বালির পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করায় উন্নয়নের নামে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। অথচ ঠিকাদাররা এসব অভিযোগ মানতে নারাজ।
মিয়ানমারের বাস’চ্যুত রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেওয়ার পর তাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত সরকার, এনজিও ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার ব্যবহৃত ভারী শত শত যানবাহন চলাচলের ফলে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের অসিত্মত্ব বিলীন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সরকার শুধুমাত্র উখিয়া-টেকনাফে সড়ক উন্নয়ন খাতে ৫৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে এ সড়কটি দ্রুত উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা যথা সময়ে বাসত্মবায়ন হয়নি। স্থানীয় বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক সমবায় সমিতির লাইন সম্পাদক জালাল উদ্দিন জানান, সংশিস্নষ্ট কর্তৃপড়্গের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের কারণে অসংখ্যা মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নালা নর্দমা ও খাদে পড়ে যানবাহনের মূল্যবান যন্ত্র নষ্ট হচ্ছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত এগিয়ে চলা আটটি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে, ১ হাজার ৭৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। উন্নয়নে বদলে যবে কক্সবাজারবাসীর জীবনযাত্রার মান। এডিপির চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে, জরুরি সহায়তা প্রকল্প-কক্সবাজার-টেকনাফ জাতীয় মহাসড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা।
জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায় ( চট্টগ্রাম জোন) কক্সবাজার অংশ, জনতাবাজার-গোরকঘাটা জেলা মহাসড়ক জেড-১০০৪ ২৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ৫৯ কোটি টাকা। খুরুস্কুল-চৌফলদন্ডি-ঈদগাঁও জেলা মহাসড়ক(জেপ-১১৩২) ১৮ দশমিক ২৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক নির্মাণে ৩৮ কোটি টাকা। এই সড়কটির কাজ শেষ হলে ঈদগাঁও থেকে কক্সবাজার সদরের দূরত্ব অর্ধেক কমে যাবে।
ইয়াংসা-মানিকপুর-শানিত্মবাজার জেলা মহাসড়ক জেড-১১২৬ ১৯ দশমিক ৫২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক নির্রমাণে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়ক জেড-১০৯৯) এর হাড়িয়াখালী হতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পূণ নির্মাণ, প্রশসত্মকরণ এবং শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে ৫ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক (ব্রিজসহ) নিরমাণে ৫৪ কোটি টাকা। কাজটি সম্পন্ন হলে দীর্ঘ ৮ বছরের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে শাহপরীর দ্বীপবাসী।
কক্সবাজার জেলার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক (এন-১১০) চার লেন উন্নীতকরণ প্রকল্পে (রিভাইসসহ) ১০ দশমিক ৯৬৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক নির্মাণে ৩৮৮ কোটি টাকা, কক্সবাজার জেলার একতা বাজার থেকে
বানৌজা শেখ হাসিনা পর্যন্ত সড়ক (জেড-১১২৫) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক নির্মাণে ৩৬১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
কক্সবাজার জেলার রামু-ফাতেখারকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক (এন-১০৯ এবং ১১৩) যথাযথ মান ও প্রশসত্মতায় উন্নতকরণ প্রকল্পে ১৬ দশমিক ৭২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক নির্মাণে ২৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই সড়কটির কাজ শেষ হলে সরাসরি রামু থেকে টেকনাফ যোগাযোগ সহজ হবে, মহাসড়কের লিংক রোড অংশে যানবাহনের চাপ ও যানজট হ্রাস পাবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসব কাজ শুরু করা হয়। আগামী ২০২২ সালের জুন মাসে উলিস্নখিত প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিভুক্ত আটটি উন্নয়ন প্রকল্পে ১ দশমিক ৭৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির তথ্য সাংবাদিকদের জানান কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের নকশা প্রণয়নকারী তিনি। আশা করছি, কাজগুলো শেষ হলে জনগণ এর সুফল পাবেন।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, সড়কের বিভিন্ন স্থানে দখল বেদখল ও বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে গিয়ে নির্মাণ কাজের গতি কমেছে। তিনি বলেন, বৃষ্টি কমলে কাজের গতি আরো তরান্বিত করার জন্য ঠিকাদারদের চাপ প্রয়োগ করা হবে।