পরিবেশে বিরূপ প্রভাব
রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
উখিয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক স্পট থেকে নির্বিচারে দিনরাত অবৈধ বালি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। খাল, বিল, নদী-নালা, পাহাড়, বন জঙ্গল থেকে অবৈধ ভাবে উত্তোলিত গাড়ি প্রতি ৩শ টাকার বালি তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ার সুবাদে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে বালি বাণিজ্য। এক শ্রেণির পেশাদার বালি উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট প্রশাসনের কতিপয় কর্মচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে প্রতিনিয়ত বালি উত্তোলন ও যত্রতত্র পরিবহনের ফলে ভাঙছে জনচলাচলের রাস্তা। হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজ, কালভার্ট, ফসলি জমি ও জনবসতি। এলাকার পরিবেশবাদী সচেতনমহল মনে করছেন, এভাবে বালি উত্তোলন অব্যাহত থাকলে উখিয়ার মানচিত্র থেকে দৃশ্যমান অনেক কিছু বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সরেজমিন ফলিয়া পাড়ার জারাইলতলী, মধুরছড়া, হরিণমারা, বাগানের পাহাড়, বাঘঘোনা, তুতুরবিল, বালুখালী খাল, মনখালীর চিকুনছুরি খাল, ছোটখাল, বড়খাল, রেজুর মোহনা, মরিচ্যা খাল, রাজাপালং, হিজলিয়া, গয়ালমারাসহ ৫০টিরও অধিক স্থান থেকে প্রতিনিয়ত বালি উত্তোলন করছে স্ব স্ব এলাকার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশের বিরূপ প্রভাবের ফলে পাড়া গাঁয়ে বসবাসরত বৃহত্তর জনসাধারণ বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজাপাল ইউনিয়নের মধুরছড়া এলাকার আবু ছৈয়দ (৪৫) এর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, বাড়িসংলগ্ন পাহাড়ের নিচে গর্ত করে সেখানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে গর্ত পরিপূর্ণ করা হয়েছে। ফলে বালির পাহাড় ধ্বসে ক্রমশ ঝরে পড়ছে বালির স্তুপ। তাছাড়া ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে ব্রিজ, কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত, ফসলি জমি ও জনবসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে থাইংখালী খালের পাড়ে বসবাসরত উমর আলী, ছৈয়দ হোছন, শামশুল হক সহ একাধিক ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। তারা বলেন, শুধু বাড়িঘর, জমিজমা নয় জন চলাচলের রাস্তায় প্রচন্ড ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সামাজিক বনায়নের গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও বন বিভাগ এ ব্যাপারে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।এলাকার ছৈয়দ হামজা (৩৫), জানে আলম (৪০)সহ একাধিক লোকজন জানান, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে চিহ্নিত কয়েকজন দালাল চক্র প্রতি মাসে অবৈধ বালি মহাল থেকে মাসোহারা আদায় করছে। যে কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে পরিবেশ ধ্বংসকারী বালি লুটপাটের সাথে জড়িত সিন্ডিকেট। বালিমহাল ইজারাদার মো. শফি বলেন, চিহ্নিত বালি লুটপাটকারী সিন্ডিকেট দোছড়ী খালের ইজারার পাস বই কৌশলে ছাপাখানা থেকে বের করে এবং তার স্বাক্ষর জাল করে উত্তোলিত বালি বিভিন্ন জনপদে উন্নয়ন কাজে সরবরাহ করে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এবাপারে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে অবহিত করেছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। উখিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিমুল এহসান খান জানান, তিনি এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত গঠন করে বালি উত্তোলনকারী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, বালি লুটপাটকারী সিন্ডিকেট এখন দিনের বেলায় বালি উত্তোলন স্থগিত রেখে রাতে বালি পাচার করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে স্থানীয় সচেতনমহলকে আন্তরিক হতে হবে। প্রয়োজনে বালি উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।