আরও দুই বছর সময় চায় কেজিডিসিএল

প্রিপেইড মিটার প্রকল্প

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয়রোধ, সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত ও গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস করতে এক লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার প্রকল্প নেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। চলতি মাসে (জুন) শেষ হতে যাচ্ছে প্রকল্পটির মেয়াদ। কিন্তু এখনও প্রিপেইড মিটার দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। তাই আরও দুই বছরের সময় চেয়ে পেট্রোবাংলার কাছে আবেদন করার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া এ প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় ‘আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প’। ২০২১ সালের ১৮ মে প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইনে প্রিপেইড মিটারের জন্য গ্রাহকদের আবেদন গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্প শুরুর বিশ (২০) মাস পর ১৪ অগাস্ট পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করে। ২৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র জমাদানের শেষ সময় থাকলেও ঠিকাদারদের অনুরোধে নভেম্বরের ২ তারিখ পর্যন্ত সময় বর্ধিত করে কেজিডিসিএল। ওদিনই দরপত্র খোলা হয়। দেখা যায়, জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড ও চায়নার এক্সিম কোম্পানি লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিলেও তারা প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটির দরপত্র বাতিল করা হয়। এরপর চলতি বছরের মার্চে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড ও চীনের একটি প্রতিষ্ঠান চিন্ট মিটার কোম্পানি লিমিটেড আবেদন জমা করে।
এখন পর্যন্ত ঠিকাদার নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। অন্যদিকে প্রায় ৮১ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এরমধ্যে গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬০০ জন। এতে ২০-৩০টির মতো আবেদন গ্রাহকদের আবেদন সংক্রান্ত ভুলের কারণে বাদ পড়ে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের আগে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে চায় সংস্থাটি।
এ নিয়ে কথা হলে এ প্রকল্পের পরিচালক ও সংস্থাটির উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলম বলেন, ‘আমরা আজকে (রোববার) পেট্রোবাংলার কাছে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা এক লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজে আরও দুই বছর সময় চেয়েছি। অর্থাৎ আগামী ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির সম্পূর্ণভাবে শেষ করবো। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে পেট্রোবাংলা প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দেবে। সবমিলিয়ে ঈদের ছুটির পর আমরা মেয়াদ বৃদ্ধির ডকুমেন্টস হাতে পেলে কাজ শুরু করবো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটি একাধিক কর্মকর্তা জানান, কর্ণফুলী গ্যাসের ৫ লাখ ৯৮ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে ২০১৫ সালে শুরু হয়ে জাইকার অর্থায়নে ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাইলট প্রকল্প ২০১৯ সালে শেষ হয়। এতে ৬০ হাজার সংযোগে প্রিপেইড মিটার সংস্থাপন করা হয়। এবারের এক লাখ প্রিপেইড মিটার সংস্থাপনের কাজ করার জন্য প্রাথমিকভাবে জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আগে তা নিশ্চিত করতে রাজি নয় সংস্থাটি।
তবে ঠিকাদার নিয়োগ ও গ্রাহক পর্যায়ে প্রিপেইড মিটার সংস্থাপন প্রসঙ্গে এ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলমের বলেন, ‘মেয়াদ বাড়ানোর আগে দরপত্র মনোনয়ন বোর্ড বসে ঠিকাদার হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করবে তা বলা সম্ভব নয়। ডিপিপির মেয়াদ বাড়ার পরপরই বোর্ড বসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বুঝিয়ে দিবো। এছাড়া বর্তমানে আবেদন করা প্রায় সব গ্রাহককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন গ্রাহকদের কাজ হলো- ঠিকাদার নিয়োগ করে গ্যাস সংযোগের ড্রয়িং ও প্ল্যান পাশ করিয়ে আভ্যন্তরীণ কাজ সেরে ফেলা। এ খরচটা গ্রাহকের। তবে মিটার বসানোর কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা করবো। সেখানে গ্রাহকদের কোনো খরচ নেই। আশা করছি, নভেম্বরে (চলতি বছরের) গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটার পাবেন।’