চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন
নীরব বিএনপি ও এলডিপি
সংবাদদাতা, চন্দনাইশ :
চন্দনাইশে ভোট মানেই উৎসব। তাই করোনার প্রকোপ কিছুটা কমার পর জনজীবন স্বাভাবিক হতেই চন্দনাইশ উপজেলার পৌরশহরে বইতে শুরু করে ভোটের হাওয়া। ইতোমধ্যে নির্বাচন নিয়ে ঝড় উঠেছে চায়ের টেবিল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর প্রস্তুতি অনেকটাই একচেটিয়া। কারণ, বিএনপি, এলডিপি ও ইসলামী ফ্রন্টসহ অন্য দলগুলোর মধ্যে পৌর নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো চাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
আসন্ন চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিশেষ করে পৌরমেয়র পদে মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের ছয় প্রার্থীর সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও নীরব রয়েছে বিএনপি, এলডিপি ও ইসলামী ফ্রন্ট। এখনো বিএনপি, এলডিপি ও ইসলামী ফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নির্বাচনের ঘোষণা দেননি কিংবা প্রচারণায় নামেননি।
আসছে ডিসেম্বরে চন্দনাইশ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনই পাড়া-মহল্লায় মতবিনিময়, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চেয়ে পোস্টারিং শুরু করেছেন। এতে চন্দনাইশ পৌর এলাকায় আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী আমেজ। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের ছয় সম্ভাব্য প্রার্থীই নৌকা প্রতীকের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা নানা কৌশলে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়টি দলের শীর্ষ পর্যায়ে ও এলাকার ভোটারদের কাছে প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যে তারা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি ওয়ার্ডের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এলাকায় সামাজিক-রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বেড়েছে নির্বাচনের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে ২৫ ডিসেম্বর ১৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চন্দনাইশ পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভাটিতে ভোটার রয়েছেন প্রায় ২৭ হাজার।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর চন্দনাইশ পৌরসভার নির্বাচন হয়। এতে মেয়র পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মু. মাহাবুবুল আলম খোকা।
চন্দনাইশ পৌরসভার বর্তমান মেয়র মু. মাহাবুবুল আলম খোকা এবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে আছেন পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম. কায়সার উদ্দীন চৌধুরী, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শেখ টিপু চৌধুরী। ২০১১ সালে চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে শেখ টিপু চৌধুরী অংশ নিয়ে এলডিপির হেভিওয়েট প্রার্থী দুবারের মেয়র মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবীর নিকট পরাজিত হন। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, মক্কা আওয়ামী ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক, প্রবাসী মদিনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সরব উপস্থিতিতে পুরো পৌর এলাকায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করলেও বিএনপি, এলডিপি ও ইসলামী ফ্রন্ট থেকে কোনো প্রার্থীই এখনো মাঠে নামেননি।
গত চন্দনাইশ পৌর নির্বাচনের মতো বিএনপি প্রার্থী না থাকলে হয়তো শেষ পর্যন্ত এলডিপি ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হতে পারে। তবে বিএনপি এবার ছাড় না দেয়ার পক্ষেই জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। আর যদি বিএনপি এবারও এলডিপিকে ছাড় দেয়, তাহলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে বরাবরের মতো এলডিপি প্রার্থীর লড়াই হবে ।
পৌর নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার চৌধুরী। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সিরাজুল ইসলাম সওদাগরের নামও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, গত ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে এলডিপির হেভিওয়েট প্রার্থী দুবারের মেয়র মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবীকে পরাজিত করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের মু. মাহাবুবুল আলম খোকা মেয়র নির্বাচিত হন। এলডিপির হেভিওয়েট প্রার্থী দুবারের মেয়র আইয়ুব কুতুবী দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করায় তাঁর নির্বাচন না করার সম্ভাবনা বেশি। এলডিপির সম্ভাব্য প্রার্থী পৌরসভা এলডিপির সভাপতি এম আইনুল কবির জোরালোভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সচিব ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম গত ২০১৫ সালে মোমবাতি প্রতীকে চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক আলমগীর ইসলাম বঈদী ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত চন্দনাইশ পৌরসভা শাখার সহসভাপতি মো. ফারুক বাহাদুর মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
ভোটাররা জানান, এলাকায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ছয়জন প্রার্থীর প্রচারণা লক্ষ করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকে রঙবেরঙের পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটিয়ে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাহির করছেন। অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। অনেক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের পছন্দের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে ছবি ও পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।