অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে টানেল

বর্তমানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ৬৩টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প, জুতা, খেলনা, ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার আমদানি প্রতিস্থাপক সিমেন্ট, ইস্পাত, ভোগ্যপণ্য, সার, পেট্রোকেমিক্যালের কারখানা রয়েছে। এতবছর এসব প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এবং নদীপথ ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করেছে । এখন বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে এক নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের।
যেমন, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠিত কোরিয়ান ইপিজেড গত অর্থবছরে রপ্তানি করেছিল প্রায় ৩৫ কোটি ডলারের (৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা) পণ্য। কোরিয়ান ইপিজেড থেকে শাহ আমানত সেতু পার হয়ে শহরের ফিরিঙ্গীবাজারের মেরিনার্স সড়ক ও মাঝিরঘাট এলাকা হয়ে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বন্দরে এনে এই পণ্য রপ্তানি হতো এতকাল। নতুবা যানজট এড়াতে সেতু থেকে শহরের বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ও আকতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক হয়ে প্রায় ২৭ কিলোমিটার বাড়তি দূরত্ব অতিক্রম করে বন্দরে নেওয়া হতো রপ্তানি পণ্য।
গত অর্থবছরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেডসহ ৪৬ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬১ কোটি ডলারের (৬ হাজার ৪১ কোটি টাকা) পণ্য রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রপ্তানিমুখীসহ আমদানি প্রতিস্থাপক ৫৩ প্রতিষ্ঠান একই সময়ে ১৮৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। রপ্তানি ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট ৬৩টি। এর মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শুধু আমদানি বা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। সব মিলিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬৩টি প্রতিষ্ঠান গত অর্থবছরে ৩৮ লাখ ৮২ হাজার টনের ২৪৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করেছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার পর এসব রপ্তানি পণ্য এখন কারখানা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে টানেলের প্রবেশপথ ধরে কম সময়ে বন্দরে আনা-নেওয়া সম্ভব হবে। শুধু কেইপিজেডই নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চালু থাকা রপ্তানিমুখী ও আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানি পণ্য পরিবহনের নতুন দুয়ার খুলে গেছে।
শুধু তাই নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে অর্থাৎ টানেলের আনোয়ারা প্রান্তের সংযোগ সড়ক থেকে এক কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৮০৫ একর জায়গায় চায়নিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের কাজ চলছে। সেখানে ৩৭১টি শিল্পকারখানা হবে। আবার মহেশখালীর ধলঘাটে সাড়ে তিন হাজার একর জায়গায় হচ্ছে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই দুটিসহ কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন পেয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে পণ্য আনা-নেওয়ার প্রধান পথ হবে এই টানেল।
সাধুবাদ জানাতে চাই সরকারকে এই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য। এই টানেল শুধু যে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখবে তা নয়। দেশের লাইফলাইন বলে খাত কর্ণফুলী নদী ভরাট হওয়ার বিপদ থেকেও বাঁচাবে। অনেকে বলছেন এই একটি টানেলের টাকা দিয়ে চারটি সেতু করা যেত। তা করা যেত বটে তবে তাতে কর্ণফুলীর যে ক্ষতি হতো তা অর্থ দিয়ে মূল্যায়নের নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই বাংলাদেশকে টানেলের যুগে নিয়ে যাওয়ার জন্য।