অরক্ষতি রলেক্রসংি মৃত্যুফাঁদ : জীবনরে নরিাপত্তা র্সবাগ্রে

রেলের অনুমোদনহীন, অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে কিছুদিন পরপরই, এ ধরণের মৃত্যুর কারণ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতা এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় না আনার প্রবণতা। বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমোদিত রেলক্রসিংয়ে পাহারাদার নিয়োগ দেয়া হলেও অনুমোদনহীন ক্রসিং নিয়ে কোনো দফতরই দায়িত্ববোধের পরিচয় দিচ্ছে না। দুর্ঘটনার পর গণমাধ্যমে কিছুদিন লেখালেখি বা আলোচনার পর সবকিছু চুপসে যায়। সরকারি সংস্থাগুলি আগের নিয়মে ফিরে যায়। এ ধরণের দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে রেল কর্তৃপক্ষ, সকল ক্ষেত্রে কারণ, সুপারিশ একই ধরণের কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা বিধানে যে কাজগুলি করা দরকার, সেগুলি আর সম্পাদন করা হয় না। রেল লাইনের ওপর দিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা তৈরি করে। যানবাহন, পথচারী চলাচল করে যথারীতি কিন্তু এসব ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা বিধানে কোন লোকবল নেই। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। যানবাহন চালক কিংবা পথচারীদের এ ধরণের অরক্ষিত ক্রসিংয়ে পার হতে যে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, অনেক ক্ষেত্রে তার ঘাটতি থেকে যায়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, কিছুদিন আগে এ ধরণের একটি অনুমোদনহীন রেলক্রসিং, যশোরের অভয়নগরের ভাঙা গেট ক্রসিংয়ে রাস্তা পেরোতে গিয়ে একটি প্রাইভেট কারের ৫ জন অরোহী মারা যান। আবার রেলের পাহারাদার আছে এমন রেলক্রসিং গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও ফেনীতে ভোরে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ৫ আরোহী মারা যান, আহত হন ১৫ জন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাহারাদার ঘুমাচ্ছিলেন। অতীতে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
একটি জাতীয় দৈনিকের এতদসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে মোট রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১, এর মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ১৪৯টির। রেল লাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশন। রেল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রাস্তা তৈরির আগে অনুমোদন নেয় না এসব প্রতিষ্ঠান। আবার রেল হাজার হাজার টাকার প্রকল্প নিলেও রেলক্রসিংগুলির পাহারায় লোকবল নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রেও তেমন অগ্রগতি নেই। রাস্তা তৈরি করা কর্তৃপক্ষের উচিত নির্মাণের পূর্বে অনুমোদন নেয়া, সরকারি বিধান অনুযায়ী তা রক্ষণাবেক্ষণ অথবা রেলওয়ের নিকট হস্তান্তর করা। কোন অবস্থাতেই ক্রসিংগুলি অনিরাপদ অথবা অরক্ষিত রাখা উচিত নয়। রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১০টি। এতে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে ১৩টি দুর্ঘটনায় মারা যান ১৮ জন।
আমরা মনে করি, রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ রাখতে পাহারাদার নিয়োগ ও সংস্কারে পৃথক বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। কোন ক্রসিং অরক্ষিত রাখা যাবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলি সমন্বয় বৈঠক করে সরকারি বিধি অনুযায়ী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কোন গড়িমসি করবে নাÑআমরা তা দেখতে চাই।
প্রতি বছরই রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলি কেবল তদন্ত কমিটি গঠন ও চিঠি চালাচালি করছে। কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মানুষের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে।