অবরোধ ডেকে পরে প্রত্যাহার

চবির দুই ছাত্রলীগ নেতাকে পেটালো যুবলীগ নেতা

ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

অভিযুক্ত ‘প্রধান’ আসামি আটক

চবি প্রতিনিধি »

দুই নেতাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের ডাকা অবরোধে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। বুধবার হঠাৎ ডাকা এই অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল, বাস, সিএনজি, রিকশাসহ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থগিত করা হয় চলমান সকল ক্লাস ও পরীক্ষা। ভোগান্তিতে পড়েন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলমান এই অবরোধ ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামে দুপুর ২টায় প্রত্যাহার করা হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১টা ৩০ টার দিকে ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের দুই নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী র্দ্জুয় ও মোহাম্মদ রাশেদ এক নম্বর গেট থেকে মোটরসাইকেলে করে ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন। মাজার গেট এলাকায় আসলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফ এবং তার ভাই ইকবাল ৮-১০ জনকে নিয়ে তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে মারধর শুরু করে। তাৎক্ষণিক এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার ভিএক্স গ্রুপের অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট ও জিরো পয়েন্ট এ টায়ারে আগুন এবং গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধের ডাক দেয়।
ভুক্তভোগী ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, হানিফের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই মাদক চোরাচালান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। মাদক মামলায় সে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলো। তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার অনুসারীরা সবসময় সোচ্চার ছিলো। এই ক্ষোভ থেকেই এ হামলা করে। এমনকি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিও ছোঁড়ে।
অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়ে দুর্জয় বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে। পাশাপাশি প্রশাসন ইতিমধ্যেই হানিফকে আটক করেছে। তাছাড়া আমাদের আশ্বাস দিয়েছে হামলায় জড়িতদের দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে। এই আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। তবে ৭২ ঘণ্টার ভেতরে অভিযুক্ত বাকিদের গ্রেফতার করা না হলে আবারও আন্দোলনে যাবো।
অভিযুক্ত হানিফের ভাই ইকবাল হোসেন জানান, হামলার ব্যাপারে কিছুই জানি না। হঠাৎ করেই শুনি আমাদের অভিযুক্ত করে ক্যাম্পাসে অবরোধ চলছে। মাদক চোরাচালান ও গাছ পাচারের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি এবং আমার ভাই ব্যবসা করি। ফার্নিচারের দোকান আছে। ফাঁসানোর জন্য এসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হঠাৎ অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকগুলো অনুষদেই চলছিলো ক্লাস-পরীক্ষা। বিশেষ করে যাদের পরীক্ষা ছিলো তাদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। বিভিন্ন অনুষদ থেকে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় ১০টার দিকে। ইতোমধ্যেই শহরে থাকা অনেক শিক্ষার্থী শাটল না চলায় বাসে করে ক্যাম্পাসে আসেন। ক্যাম্পাসে এসেও এক নম্বর গেটে ছাত্রলীগের অবরোধের মুখে পড়েন। পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শতাব্দী সেতু বলেন, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফেনী থেকে আসি। এসে শুনি পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
পূজা চৌধুরী নামক এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কারো ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ইস্যুর ভুক্তভোগী কেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা হবে? রাজনৈতিক নেতারাই যদি সিদ্ধান্ত নেন পরীক্ষা হবে না স্থগিত হবে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন রয়েছে? এভাবে ঝামেলা করে শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ কেন দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া জানান, অভিযুক্তদের ব্যাপারে হাটহাজারী থানা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কখনোই কাম্য নয়। চেষ্টা ছিলো দ্রুত সমস্যা সমাধানের।