অবরোধে অগ্নিদগ্ধ ট্রাক হেলপারের মৃত্যু

বাড়িতে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিনিধি, মাটিরাঙা »

১০ মাসের অবুঝ শিশু সন্তান আরিফ মায়ের কোলে কাঁদছে। আকাশের দিকে নির্বাক তাকিয়ে সবচেয়ে বড় ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী মো. ফারুক। কান্না থামছে না বড় মেয়ে শিল্পী আক্তারেরও। পুরো পরিবারেই এমন শোকের মাতম। আপন মানুষকে হারিয়ে স্ত্রী, সন্তানরা বারবারই মূর্ছা যাচ্ছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে অসহায় পুরো পরিবার। অবরোধ চলাকালে অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মারা যাওয়া পরিবহন শ্রমিক মো. বেলাল হোসেন (৪২) এর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এমন করুণ চিত্র। শুধু পরিবারেই নয়, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী বেলাল হোসেনের জেলার মাটিরাঙা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শগ্রাম মধ্যপাড়া এলাকায় প্রতিবেশীরাও শোকে মূহ্যমান।

২৭ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের গুইমারা উপজেলার হাফছড়িতে সরকারি চালবাহী ট্রাক থামিয়ে পোট্রোল বোমা ছোড়ে অবরোধকারীরা। ওই ঘটনায় ট্রাক চালকের সহকারী বেলাল হোসেনের শরীরের প্রায় পুরো অংশ পুড়ে যায়। চালক মো. এছহাক মিয়াও আহত হন। ঘটনার ৬দিন পর শনিবার বিকেলে রাজধানীতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলাল হোসেন মারা যান।

সেই গাড়ির চালক এছহাক মিয়া জানান, ‘হামলাকারীদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও পায়নি। দুর্বৃত্তরা ট্রাকে আটকে রেখেই দু’জনকে জীবন্ত হত্যা করতে চেয়েছিল।’ এ কেমন রাজনীতি; প্রশ্ন তোলেন ট্রাক চালক।

বেলালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া শিশু সন্তান মো. মারুফের জন্য শীতের জ্যাকেট আর কেনা হবেনা। কাজ থেকে ফিরে ছেলের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে আসবে বলে কথা দিয়েছিল তার বাবা। বেলালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম তার স্বামীকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার দাবি করেন।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত ন¤্র ও ভদ্র স্বভাবের ছিলেন বেলাল হোসেন। ট্রাকে হেলপারের পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করতেন। আগের সংসারেও ৪ ছেলেমেয়ে ছিল। অভাবের কারণে সন্তানদের বেশি পড়াতে পারেননি। বর্তমানে ছোট দুই ছেলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। নিজের জীর্ণশীর্ণ ঘরে কষ্ট করে থাকতেন তারা।

এদিকে পরিবারের সদস্য ও গ্রামের প্রতিবেশীরা বেলাল হোসেনের মৃত্যুর জন্য অদূরদর্শী রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দায়ী করেছেন। তারা জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

প্রতিবেশী আমির হোসেন বলেন, ‘রাজনীতি হবে জনগণের জন্য। কিন্তু রাজনীতির নামে মানুষ হত্যায় যারা মেতে উঠে, তারা দেশের শত্রু। তাদের প্রতিহত করা উচিত।’এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, ‘খুবই ভালো মানুষ ছিলেন বেলাল হোসেন। অভাব থাকলেও সন্তানদের আগলে রাখতেন পরম মমতায়।’ বেলালের ভোট ভাই আবু ব্বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা খুবই গরীব। দিনে আনি, দিনে খাই। ভাইয়ের পরিবারের দিকে নজর দেয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই। আমি তার পরিবারের জন্য সাহায্য কামনা করছি।’ এদিকে সোমবার রাতেই ট্রাক হেলপার বেলাল হোসেনের মৃতদেহ মাটিরাঙায় পৌঁছায়। এর আগে ঢাকায় তার মৃতে হের ময়নাতদন্ত করা হয়।

এ বিষয়ে গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ রাজিব চন্দ্র কর জানান, ট্রাকের চালক মো. এছহাক মিয়ার দেয়া মামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৬ বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।