অন্য হাসপাতালে ঠাঁই নেই, হলি ক্রিসেন্ট রোগী নেই

রোগীর সংখ্যা ১৩, চিকিৎসক-নার্স ৫০ !
হাসপাতালটি চালুর ১৮ দিনে ১৮ জন রোগীও ভর্তি হয়নি!

সালাহ উদ্দিন সায়েম :
নগরীর আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ শয্যা ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনা আক্রান্ত রোগীতে ঠাসা। ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতাল ও বেসরকারি ফিল্ড হাসপাতালের ৫০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডেও ঠাঁই পাচ্ছেন না করোনা রোগীরা। এক সপ্তাহ আগে চালু হওয়া রেলওয়ে হাসপাতালের ৫০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডেও রোগী পরিপূর্ণ।
এই পাঁচটি হাসপাতালে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। অথচ নগরীর খুলশী এলাকার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি রোগী শূন্যতায় ভুগছে! বেসরকারি এ হাসপাতালটিতে সরকার ৫০ জন চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ দিলেও সোমবার পর্যন্ত সেখানে রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ১৩ জন। হসপিটালটিতে ২৮ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ১৮ শয্যার আইসিইউ ইউনিট রয়েছে।
গত ২১ মে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সহায়তায় গত চার বছর ধরে বন্ধ থাকা এই ক্লিনিকটি সংস্কার করে করোনা চিকিৎসার জন্য চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। হাসপাতালটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
হলি ক্রিসেন্টে কেন রোগী যাচ্ছে না?
হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি চালু হওয়ার ১৮ দিনে ১৮ জন রোগীও ভর্তি হয়নি। সোমবার পর্যন্ত মাত্র ১৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে হাসপাতালটিতে।
হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনোয়ার হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, এটি জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। জেনারেল হাসপাতাল থেকে যে রোগী রেফার করা হয় কেবল তাদের ভর্তি করা হয় এখানে। এ হাসপাতালে সরাসরি রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। রোগীর সংখ্যা কম কেন জানতে চাইলে তিনি এর উত্তর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চাইতে বলেন।
জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায় ডা. শফিকুল ইসলাম সুপ্রভাতকে বলেন, হলি ক্রিসেন্টে আমরা কোনো রোগী রেফার করলে তারা সেখানে যেতে চায় না। আমি দায়িত্বে আসার পর কয়েকজন রোগীকে নিজেই হলি ক্রিসেন্টে যাওয়ার রেফার করেছিলাম। পরে জানতে পারি তারা সেখানে যায়নি। এর কারণ আমার জানা নেই।
তবে ডা. শফিকুল ইসলাম হলি ক্রিসেন্টে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়টি আমাদের আগে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু হলি ক্রিসেন্টে মাত্র ১৭টি সিলিন্ডার রয়েছে। অথচ আইসিইউতে একজন রোগীর জন্য দিনে ৪টা সিলিন্ডার লাগে। আইসোলেশনে থাকা রোগীর জন্যও সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। এছাড়া এসব সিলিন্ডার খালি হয়ে গেলে রিফিল নিয়ে আসার জন্য আমাদের নিজস্ব কোনো যানবাহন নেই।
জানা গেছে, হলি ক্রিসেন্টের আইসিইউতে সোমবার পর্যন্ত ৩ জন ও এইচডিইউতে ৪ জন রোগী ভর্তি আছে। আর আইসোলেশন ওয়ার্ডে রয়েছে ৬ জন।
হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনোয়ার হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, এই হসপিটালটি করোনা চিকিৎসার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এখানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। আনুষঙ্গিক অনেক যন্ত্রপাতির সঙ্কট রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স না থাকায় আইসিইউ সীমিত আকারে চালু করা হয়েছে। এখানে চিকিৎসক, নার্সদের থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর পর্যাপ্ত কর্মচারী নেই।
চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গত ৪ এপ্রিল নগরীর বেসরকারি ১২ টি ক্লিনিক নির্বাচন করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু ক্লিনিকগুলো করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর ক্লিনিক মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নগরীর খুলশী জাকির হোসেন সড়কের পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে করোনার চিকিৎসার জন্য চালুর উদ্যোগ নেয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের অর্থায়নে হাসপাতালটি সংস্কার করে গত ২৫ মার্চ প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু পরে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এই ক্লিনিকটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধীনে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু এই ক্লিনিকটি পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জেনারেল হাসপাতালের অধীনে দুইজন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্লিনিকটি চালু করার নির্দেশ দেয়।