৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দে সড়ক উন্নয়নকাজে ধীরগতির অভিযোগ

SS

আটমাসেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া »

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের শান্তিবাজার পয়েন্ট থেকে কাকারা মানিকপুর ইয়াংছা সড়ক উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধীরগতি ও চরম অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া ১৯ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজটি ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ করার কার্যাদেশ থাকলেও গেল আটমাসে কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ অবস্থায় মেরামত কাজ শুরুর প্রাক্কালে সড়কের বিভিন্নপয়েন্ট থেকে খুলে নেয়া ইট-সুরকির স্থানগুলো বৃষ্টির পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতেকরে চলাচলের ক্ষেত্রে সড়কটির উপর নির্ভরশীল অন্তত চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।এলাকাবাসী জানান, নির্মাণকাজের মূলসময় শুষ্ক মৌসুমে কাজের গতি দ্রুত থাকার কথা থাকলেও শুরুতে একমাস কিছু কিছু অংশে কাজ করে মাঝপথে রেখে রহস্যজনক কারণে উধাও হয়ে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এতে নিজেদের দায় এড়াতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঠিকাদারকে শোকজ পর্যন্তও করে। এখন বর্ষার আগে এসে আবারও খোঁড়াখুড়ি চালাচ্ছেন ঠিকাদার। এই অবস্থায় কয়েকদফা বৃষ্টি শুরুর পর থেকেই ছিন্নভিন্ন এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে লাখো জনগণের চরম দুর্দশা  তৈরি হয়েছে। আগামী বর্ষায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে জনমনে।

জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলা সদরের সাথে চারটি ইউনিয়ন বরইতলী, লক্ষারচর, কাকারা এবং সুরাজপুর-মানিকপুর এবং পার্বত্য দুই উপজেলা লামা ও আলীকদমের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯ কিলোমিটার র্দীঘ সড়কটি নির্মাণ করছে। কাজে ধীরগতির অভিযোগ তুলে কাকারা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি অহিদুজ্জামান অহিদ বলেন, ‘কাজ শুরুর আগে লোকালয়ে থাকা সড়কের অংশ বর্ষার আগে শেষ করার দাবি ছিল সে অনুযায়ী কিছুটা কাজও হয়েছিল। পরে ঠিকাদার এই অংশের কাজ মাঝপথে রেখে পাহাড়ি এলাকার অংশে কাজ শুরু করেছে। ফলে এখন বর্ষা মৌসুমে এখানে এসে আবারও সড়ক খোঁড়াখুড়ির কাজ শুরু করায় দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। এতে সাধারণ জনগণ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে।’জানতে চাইলে কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের চেষ্টায় বিপুল টাকা বরাদ্দ দিয়ে এই সড়কটি নির্মাণ করছে সরকার। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার পরও প্রত্যাশিত গতিতে কাজ না হওয়ায় আমাদেরকেই দোষারোপ করছে জনগণ। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ শেষ করার জনদাবিকেও গুরুত্ব দেয়নি ঠিকাদার।

প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী জানা গেছে, বর্তমানে কাকারা অংশের সড়কটি ১০ ফুট প্রস্থ। একে বাড়িয়ে ১৮ ফুট প্রস্থ করা হবে। এর বাইরে থাকবে চারফুট মাটির অংশ। কিন্তু ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির জিদ্দাবাজার থেকে টোব্যাকো অফিস পর্যন্ত ৪৫০ মিটার অংশ উঁচু করে এবং পাথরের খোয়া দেয়া শেষ হয়েছে চারমাস আগে। এরপর আর কাজ এগোয়নি। এই সড়কের অনেকস্থানেও নির্ধারিত ১৮ ফুট প্রস্থ নেই। কারও বাড়ির দেয়াল, স্কুল-মসজিদের কর্ণারের অংশও ভাঙা হয়নি। শুধু তাই নয়, সড়কের এই অংশে দুটি কালভার্ট আছে যেগুলোর প্রস্থ ১০ ফুট। কালভার্ট দুটিকে ১৮ ফুট প্রস্থে করার সিদ্ধান্ত হলেও এখনও অনুমোদন মিলেনি।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, যে পরিমাণ কাজের অগ্রগতি হওয়ার কথা তা হয়নি এবং ঠিকাদারের পারফরমেন্সে আমরাও সন্তুষ্ট নই।’ সড়ক নির্মাণকাজের বিপরীতে কতটাকা ছাড় হয়েছে, জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাজের চেয়েও কম টাকা ছাড় করা হয়েছে। তাদের কাজের পারফরমেন্সে আমরাও সন্তুষ্ট নই। তবে এখন থেকে কাজের গতি দ্রুত করার কথা বলবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আরএবিআরসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম আবীর বলেন, ‘করোনাকালীন দুর্যোগ, সেই সময়ে উপকরণ সরবরাহ সংকট, আর্থিক সংকটের কারণে আমাদের কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। একইসাথে কত কিলোমিটার সড়ক সিসি ঢালাই এবং কত কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং হবে তা এখনও চুড়ান্ত হয়নি। এখানে ইচ্ছেকৃত ধীরগতির সুযোগ নেই।’ইয়াংছা অংশে কাজ শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাকারা অংশে ভালো মাটি সরবরাহ না পাওয়ায় শেষপ্রান্তে কাজ করতে গিয়েছি। এখন সেখানেও কাজ করতে গিয়ে আরও জটিলতায় পড়েছি। বনভূমির একটি অংশ অধিগ্রহন করা হয়নি।’তিনি বলেন, ‘১৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সবচে বেশি দুই লেয়ারের কাজ হয়েছে তিন কিলোমিটারে। সড়কের বাকি অনেক অংশে প্রস্থ করার কাজ শেষ দিকে। আগামী একমাসের মধ্যে কাজের বড় অগগ্রতি এবং দৃশ্যমান হবে।’এলাকাবাসী বলছেন, ‘একই ঠিকাদার কক্সবাজারে আরো দুটি সড়ক নির্মাণকাজ করছে। সেই প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু চকরিয়া উপজেলার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি কেন হতাশাব্যাঞ্জক তা খতিয়ে দেখা উচিত।’