-
৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত
-
কৃষকের মুখে হাসি
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ত্রুটির কারণে মেরামত করতে হলেও এবছর কোন বিপত্তি ছাড়াই সচল করা সম্ভব হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে স্থাপিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থায়ী রাবার ড্যাম দুইটি। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ নদীর পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানো কার্যক্রম শেষ হয়েছে। একইদিন শুরু হয়েছে নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানোর কার্যক্রম। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটি ফুলানো শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া শাখার সহকারি প্রকৌশলী (এসও) মো. শাহ আরমান সালমান। অপরদিকে যথাসময়ে রাবার ড্যাম দুইটি ফুলানো সম্ভব হওয়ায় নদীর মিঠাপানি আটকে সেচ সুবিধা নিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত হয়েছে। এতে দুই উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালের দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চকরিয়া উপজেলাকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনতে সর্বপ্রথম মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে অস্থায়ী ভিত্তিতে দুইটি ক্রসবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দের বিপরীতে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর পালাকাটা পয়েন্টে দুইটি অস্থায়ী মাটির বাঁধ (ক্রসবাঁধ) তৈরি করে মিঠাপানি আটকে অবিভক্ত চকরিয়া (পেকুয়াসহ) উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত করে আসছিলেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, প্রতিবছর নদীতে দুইটি অস্থায়ী ক্রসঁবাধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় নদীর দুই পয়েন্টেই স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে মাতামুহুরী সেচ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে স্থায়ী রাবার ড্যাম দুইটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেন। মুলত ২০০৯ সালের পর থেকে স্থায়ী রাবার ড্যামের মাধ্যমে নদীর মিঠাপানি আটকে সেচ সুবিধা নিয়ে নির্বিঘেœ চাষাবাদ করে আসছিলেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার কৃষকরা। পাউবো’র চকরিয়া শাখার সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. শাহ আরমান সালমান বলেন, কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রায় প্রতিবছর রিপেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দুইটি রাবার ড্যাম সচল করে আসছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এবছর কোন সমস্যা ছাড়াই ফুলানো সম্ভব হয়েছে নদীর দুই পয়েন্টে স্থাপিত রাবার ড্যাম দুইটি।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার নদীর পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানো কার্যক্রম শেষ হয়েছে। একইদিন শুরু হয়েছে নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানোর কার্যক্রম। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটি ফুলানো শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন এসও মো. শাহ আরমান সালমান। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেছেন, যথাসময়ে মাতামুহুরী নদীর দুইটি রাবার ড্যাম ফুলানো সম্ভব হওয়ায় চাষাবাদে সেচ সুবিধা নিয়ে কৃষকদের শঙ্কা কেটে গেছে। পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানো শেষ করে বাঘগুজারা পয়েন্টে শুরু করায় এখন নদীতে পানি প্রবাহ স্থির হচ্ছে। এতে বরাবরের মতো সেচ পাম্পের সাহায্যে দুই উপজেলার ৬০ হাজার একর জমিতে নির্বিঘেœ চাষাবাদ করতে পারবেন কৃষকেরা।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ বলেন, প্রতিবছর দুইটি রাবার ড্যামে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও বিভিন্নধররের সমস্যা দেখা দিত। বিশেষ করে চাষাবাদ শুরুর প্রাক্কালে রাবার ড্যাম অকার্যকর হয়ে পড়ার কারণে বিগত কয়েকবছর কৃষকেরা সেচ সুবিধা নিয়ে চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন। তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এবছর রাবার ড্যাম দুইটি ফুলানোর আগে সতকর্তা অবলম্বন করা হয়।