বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেছেন, বাংলাদেশের প্রায় ২ লক্ষ লোক ইতালিতে সুনামের সাথে কাজ করছেন। তারা গতবছর প্রায় ১.২ বিলিয়ন ইউরো রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ইতালিতে আরো দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। ভবিষ্যতেও বৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি নেয়া হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে যৌথভাবে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এবং ম্যানেজমেন্ট এডুকেশন সেন্টার করা যেতে পারে।
তিনি গতকাল বুধবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ইতালি একটি পরিবেশবান্ধব দেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জি২০ সম্মেলনে বায়োফুয়েল ইনিশিয়েটিভ এ স্বাক্ষর করেন। ফলে বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে ইতালি বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা প্রদানে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ইতালি। গত বছর ইতালি-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পার করেছে। বাংলাদেশের ৭ম রপ্তানি বাণিজ্য কেন্দ্র ইতালি। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে প্রচুর তৈরিপোশাক রপ্তানি হয়। ভবিষ্যৎ বাজার চাহিদানুযায়ী রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে তৈরিপোশাক বৈচিত্র্যকরণের কোন বিকল্প নেই।
রাষ্ট্রদূত ইতালিয়ান ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের ফুড প্রসেসিং, মেশিনারিজ, আইসিটি, শিপবিল্ডিং এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ইতালিতে রপ্তানিকৃত বাংলাদেশি পণ্যের অধিকাংশই তৈরিপোশাক। তাই রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল, মিঠা পানির মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক খেলনা এবং বাই সাইকেল আমদানির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চল বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে । তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ইতালিয়ান ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আহ্বান জানান।
ওমর হাজ্জাজ বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ন্যায় ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো যাতে কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখে সেজন্য রাষ্ট্রদূতের সহায়তা কামনা করেন। একই সাথে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট জ্বালানি চাহিদার ৪০% পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে মেটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় রুফটপ সোলার স্থাপনে বিনিয়োগ করছে শিল্প মালিকরা। এক্ষেত্রে ইতালি বিনিয়োগকারীদের এ সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানান চেম্বার সভাপতি।
চেম্বার সহসভাপতি রাইসা মাহবুব বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতে ইতালিয়ান মেশিনারিজের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং ইতালি থেকে আমদানিকৃত পণ্যের সিংহভাগই বিভিন্ন খাত ও শিল্পের মেশিনারিজ। তাই ইতালির রপ্তানিকৃত মেশিনারিজের জন্য সার্ভিস সেন্টার স্থাপন এবং মেরামতের জন্য অপারটেরদের দক্ষ করে গড়তে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে যৌথ ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় ইতালির অনারারি কনস্যুল মীর্জা সালমান ইস্পাহানী, তুরস্কের অনারারি কনস্যুল জেনারেল সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান, চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও ওমর মুক্তাদির, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী, বিকেএমইএ’র পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান, মেরিডিয়ান গ্রুপের পরিচালক আকিব কামাল, বাংলাদেশ-কোরিয়া ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নুরুজ্জামান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোরশেদুল হক এবং ইউরো এক্সিম ব্যাংক, বিএসআরএম গ্রুপ ও ব্র্যাক প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে ফিলিপাইনের অনারারি কনসাল এম এ আউয়াল, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ কে এম আক্তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর) ও আখতার উদ্দিন মাহমুদ, বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি