সুপ্রভাত ডেস্ক »
‘ক্যাচেস উইন ম্যাচেস’- ক্রিকেটের প্রচলিত প্রবাদটা যে সত্য, তার প্রমাণ আবারও মিললো হারারেতে। ক্যাচ মিসে বাংলাদেশ এমন দুজনকেই জীবন দিলো, যাদের আধিপত্যে পরে ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেছে সফরকারী দল। প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের কাছে ৫ উইকেটে হারের লজ্জায় ডুবেছে তামিম ইকবালের দল। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের কাছে সর্বশেষ ওয়ানডে হেরেছিল ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে।
অথচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের পর প্রিয় ওয়ানডে ফরম্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশাই করা হচ্ছিল। প্রথম দুই ওভারে মোস্তাফিজ-শরিফুল দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে শুরুর কাজটা ভালো মতোও করেছিল। প্রাথমিক ধাক্কার পর মাধেভেরে-কাইয়ার ৫৬ রানের জুটিও অতটা বিপজ্জক মনে হচ্ছিল না। মাধেভেরের রান আউটে ভাঙে এই জুটি। কিন্তু এর পরেই যে সিকান্দার রাজা-ইনোসেন্ট কাইয়া জুটি অসাধ্য সাধন করবেন তা কে ভেবেছিল? অবশ্য ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে অবদান ছিল সফরকারীদের। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৩০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে থাকা সিকান্দার রাজা ৪৩ রানে ফিরতে পারতেন। তখন ২৭তম ওভার চলছিল। তাসকিনের শেষ বলে কভারে তাইজুল ক্যাচটা নিতে পারলে ম্যাচের ফলটা ভিন্ন হলেও হতে পারতো।
এমন ব্যর্থতার উদাহরণ বাংলাদেশ আরও রেখেছিল পুরো ম্যাচটায়। ৩২তম ওভারে শরিফুলের বলে ক্যাচ উঠেছিল কাইয়ার। কিন্তু থার্ড ম্যানে সেটি লুফে নিতে পারেননি তাসকিন। শেষ বলে তো কাইয়ার ক্যাচ মিস করেন শরিফুল নিজেই। যেসব ভুলের সুযোগে জয়ের পথে মেইডেন সেঞ্চুরি তুলে নিতে পেরেছেন কাইয়া। রাজা তো শেষ পর্যন্ত চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন।
কাইয়াকে ফিরিয়ে ম্যাচ জেতানো ১৯২ রানের জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক। তার আগে অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫ বছরের পুরো পার্টনারশিপ রেকর্ড ভেঙে ফেলে এই জুটি! যে কোনও উইকেটে এতদিন সেরা জুটিটি ছিল ১৯৯৭ সালে ফ্লাওয়ার ভাইদ্বয়ের করা ১৬১ রান।
কাইয়া ফেরার আগে ১১০ বলে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১২২ রান। পরে অবশ্য রাজা ৪৮.২ ওভারে ছক্কা মেরে নিশ্চিত করেছেন জয়। শেষ বেলায় জঙ্গোয়ের পঞ্চম উইকেট নিতে পারলেও সেটি জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি। পুরো সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রাজা ১০৯ বলে ১৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন। তাতে ছিল ৮টি চার ও ৬টি ছয়। ম্যাচসেরাও ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক, মেহেদী হাসান মিরাজ, শরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন মোসাদ্দেক। ৬৭ রান দিয়েছেন। মিরাজও দিয়েছেন ৫৯ রান। মোস্তাফিজ-শরিফুল দিয়েছেন ৫৭ রান করে।
শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস হারলেও নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩০৩ রান করে বাংলাদেশ। স্বাগতিক বোলারদের পরীক্ষা নিয়ে চমৎকার ব্যাটিংয়ে ফিফটি পেয়েছেন- লিটন, এনামুল, তামিম ও মুশফিক। মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ২০ রান ধরলে ব্যাট করা পাঁচজনই গিয়েছেন দুই অঙ্কের ঘরে।
দারুণ শুরুতে শক্ত ভিত এনে দেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দুজনই পেয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। তামিম ফেরার আগে ৮৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে করেছেন ৬২ রান। পাশাপাশি দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে স্পর্শ করেছেন ৮ হাজার রান।
বাংলাদেশ অধিনায়ক তিন অঙ্কের ঘরে যেতে না পারলেও লিটন এগিয়ে গেছেন। যদিও শুরুটা ছিল মন্থর। সময় গড়ানোর সঙ্গে চওড়া হতে থাকে ব্যাট। দুর্ভাগ্য তার এই পথ চলায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় চোট! পায়ের পেশিতে টান লাগায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এই ওপেনার।
উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গে ১১৯ রান যোগ করেন লিটন। অধিনায়কের আউটের পর এনামুলের সঙ্গে ৫০ বলে ৫২ রানের জুটি গড়েন তিনি। আর নিজে বাহারি সব শটে ৮৯ বলে ৮১ রান করেছেন। খবর ঢাকাপোস্ট।
লিটনের আউটের পর স্কোর বাড়িয়ে নেওয়ার মিশনে নামেন এনামুল। তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফিরে হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ৭৩ রানে থামতে হয়েছে তাকে। অভিষিক্ত ভিক্টর নিয়াউচির শিকার হওয়ার আগে ৬২ বলের ইনিংসটি সাজান ৬ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায়।
অন্যপ্রান্তে তাকে সঙ্গ দেওয়া মুশফিকও কম যাননি। জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রামে থাকা এই ব্যাটার ওয়ানডে দিয়ে ফিরেই করেছেন হাফসেঞ্চুরি। ৪৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে তিনি ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন। অন্যদিকে শেষ দিকে নেমে মাহমুদউল্লাহ ১২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে অপরাজিত থাকেন ২০ রানে। জিম্বাবুয়ের দুই বোলার- নিয়াউচি ও রাজা প্রত্যেকে নিয়েছেন একটি করে উইকেট।