সুপ্রভাত ডেস্ক »
‘ম্যাগনেটিক সীমানা পিলার’ বিক্রি থেকে কোটি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকা থেকে মো. জুয়েল হোসেন (৩৩) ও মো. আজমকে (৫৫) গ্রেফতার করা হয়; এদের মধ্যে জুয়েলকে চক্রের ‘হোতা’ বলছে পুলিশ। এই চক্রটি একটি নিবন্ধনহীন সমবায় সমিতি চালাত, যার কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন মো. আজম। খবর বিডিনিউজের।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর জোন) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গ্রেফতার জুয়েল বিভিন্ন মানুষকে বলতেন- তার কাছে থাকা একটি ম্যাগনেটিক সীমানা পিলার বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩০০ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন, এর মধ্যে ৪০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাও হয়ে গেছে।
‘তিনি আরও বলতেন- পিলারটি বিক্রির ৩০০ কোটি টাকা সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে জমা আছে। এসব টাকা এককভাবে নিজের অ্যাকাউন্টে আনা সম্ভব না, সেজন্য কয়েকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসব টাকা দেশে আনতে হবে। টাকা দেশে এনে জনপ্রতি সাত কোটি টাকা করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন জুয়েল।’
সহকারী কমিশনার জানান, ওই টাকা আনতে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা বলেও জুয়েল অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বেশ কয়েকজনকে পাসপোর্টও তৈরি করে দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
তিনি জানান, ভোলার চরফ্যাশন থেকে চট্টগ্রামে এসে এক সময় সবজি বিক্রি করতেন জুয়েল। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় নিজেকে কবিরাজ পরিচয় দিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে টাকা আত্মসাৎ করা শুরু করেন।
এরই মধ্যে ম্যাগনেটিক সীমানা পিলার বিক্রির গল্প এবং টাকা আদায়ের তথ্য জানতে পারে পুলিশ; পরে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সন্ধান পেয়ে তারা বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
বন্দর থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, ‘বন্ধুমহল গ্রীণবাংলা সমবায় সমিতি’ নামে নিবন্ধনবিহীন সমিতি রয়েছে জুয়েল ও তার সহযোগীদের। এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা সংগ্রহ করতেন তারা।
প্রাথমিকভাবে তারা ৫৯ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া অন্তত ৩০ জনকে পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে তারা।
প্রতারণার শিকার হয়ে সোহাগ নামে এক ব্যক্তি জুয়েলসহ কথিত ওই সমবায় সমিতির চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে।
ওসি বলেন, মামলার বাদী সোহাগ আগে বন্দর থানার কলসীদিঘী এলাকায় জুতার ব্যবসা করতেন। করোনাভাইরাস মহামারীতে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় জুয়েলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ব্যবসার উন্নতির জন্য জুয়েল সাত কোটি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সোহাগের কাছ থেকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা নেন। এভাবে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় চার লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
সোহাগের অভিযোগ, কয়েক দফায় চার লাখের বেশি টাকা দেওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, জুয়েল এভাবে সাত কোটি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আরও অনেকের কাছে থেকে টাকা সংগ্রহ করেছেন।
১৬ মে সোহাগ কথিত ওই সমবায় সমিতিতে গেলে তাকে জুয়েল, আজম, শেথ মোহাম্মদ ইসা ও শাওন নামে অন্য একজন মিলে মারধর করেন।
ওসি সঞ্জয় জানান, সোহাগ প্রথমে মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তার প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে কথা বললে তিনি মামলা করেন।