সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশে ২০২৩ সাল থেকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে কোন বার্ষিক পরীক্ষা থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাক্রমের ঘোষণা করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব তথ্য জানান।
নতুন শিক্ষাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে কিছু বিষয়ের ওপর পড়াশোনার সময় মূল্যায়ন হবে, কিছু বিষয়ের ওপর হবে বার্ষিক মূল্যায়ন। মোট নম্বরের ৬০ শতাংশ নম্বরের মূল্যায়ন হবে শ্রেণিকক্ষে, বাকি ৪০ শতাংশ নম্বরের মূল্যায়ন হবে বার্ষিক পরীক্ষায়। খবর বিবিসি বাংলার।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ওপর। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারিত হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল মিলিয়ে।
নবম দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ইত্যাদি বিভাগ থাকবে না। একজন শিক্ষার্থী কোন বিভাগ নিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে।
শিক্ষা নিয়ে সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য সামনের বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ছয় মাস প্রয়োগ করা হবে। এই সময় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং শুরু হবে।
২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে শুরু হয়ে ২০২৫ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, ‘আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি ও মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।’
সরকারের পরিকল্পনায় পুরো শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক, আনন্দময় এবং বিষয়বস্তুর চাপ কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দু’হাজার আরো সালে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়েছিল। সাধারণত পাঁচ বছর পরপর শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়।
২০২১ সাল থেকেই নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে যায়।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন।
পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকছে কি না- জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘প্রাথমিকে শেষে একটি সনদ পেল, ক্লাস এইট শেষে একটি সনদ পেল। তার মানে না যে প্রত্যেক ক্ষেত্রে সনদ দিতে হবে। আমি যদি ক্লাস শেষ করি সেখানেও তো সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে। সনদের জন্য শিক্ষা নয়, পারদর্শিতা নিশ্চিত করতে চাই।
‘অষ্টম ও প্রাথমিকে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না এবং প্রতিটিতে সমাপনী পরীক্ষা হবে। সনদ দেওয়ার জন্য পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই। পিইসি এখনও ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি পাবলিক পরীক্ষা, বছর শেষে প্রতিক্লাসে মূল্যায়ন হবে। দশম, একাদশ ও দ্বাদশে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছি, এইচএসসির পরীক্ষার রেজাল্ট হবে একাদশ ও দ্বাদশ মিলিয়ে।’
প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই রূপরেখা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক আলাদা আলাদা ছিল। একজন শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিকে ঢুকে মাধ্যমিকে যাচ্ছে। এ জন্য এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়া যেন খুব মসৃণ হয়, মাঝে যেন ছেদ না পড়ে, অন্য স্তরে গিয়ে যেন খাপ খাওয়াতে কোনো সমস্যা না হয়, সেটি আমরা দেখার চেষ্টা করেছি।’
পুরো শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘আনন্দময় পড়াশোনা হবে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানো হবে। গভীর শেখনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুখস্ত নির্ভরতার বিষয়টি যেন না থাকে, এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধূলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই যেন অধিকাংশ পাঠ গ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
‘এরপর শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। পড়াশোনার বাইরে খেলাখূলা বা অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ কমে গেছে, এটা যেন না হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।’