বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতে লেনদেন শুরু হয়ে গেছে গতকাল থেকে। মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে মার্কিন ডলার হচ্ছে অন্যতম প্রধান মুদ্রা। ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এত দিন ডলারেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করে আসছে। ব্যতিক্রমের মধ্যে যেমন চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারেন। ভারত অবশ্য ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করেছে আগেই। তবে দেশটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু করতে যাচ্ছে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য।
ধারণা করা হচ্ছে, সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রফতানির মূল্য বিনিময় জনপ্রিয় হয়ে উঠলে দুই দেশের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর চাপ কমবে। তাছাড়া আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের দুবার মুদ্রা বিনিময় করার খরচ কমবে। এতে লেনদেন নিষ্পত্তিতে সময়ও বাঁচবে।
বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ এবং প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয় দেশে। এদিকে ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যের আগামী সেপ্টেম্বরে দেশে টাকা-রুপিভিত্তিক ডেবিট কার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা টাকা দিয়ে যেমন দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন, তেমনি একই কার্ড দিয়ে ভারতে গিয়ে রুপিতে কেনাকাটা করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রুপিতে লেনদেন কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো এ মুদ্রায় এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলেও তা করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রুপির কার্ড ইস্যু করা হলে ভারতে ভ্রমণ, চিকিৎসা বা শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে ডলার কিনে রুপি কিনতে হবে না। ফলে সরাসরি রুপি পাওয়ায় ডাবল এক্সচেঞ্জ করতে হবে না। এটা একটা দারুণ সুযোগ তৈরি করবে। তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রুপির মুদ্রা বিনিময় হার এখনো পরিষ্কার না। ২ বিলিয়ন রফতানির মাধ্যমে রুপি আয় করতে পারলেও বাকি ১২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি কি রুপিতে নাকি ডলারে হবে সেটাও এখনো পরিষ্কার নয়। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটা কতটা কার্যকর হবে তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
ডলারের বিকল্প ভাবা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। খাদ্যপণ্যসহ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যকে রুপিতে আমদানি করতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ভারত একটি বড় অর্থনীতির দেশ। এত বড় অর্থনীতির দেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে। বাংলাদেশ যেন কোনভাবে ক্ষতির ভাগিদার না হয়। ইতিবাচক দিক হচ্ছে রুপিতে লেনদেন শুরুর মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আসবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ