নিজস্ব প্রতিবেদক »
এবার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে জনগণ এবং স্টেকহোল্ডারদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলে এবারের মাস্টার প্ল্যানটি হবে তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত। গতকাল চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-র যৌথ উদ্যোগে নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ’র সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
সভায় মাস্টারপ্ল্যানের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. আহসানুল কবির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ লতিফ বলেন, ‘দেশের প্রধান বন্দর নগরী ও বিনিয়োগ হাব হিসেবে চট্টগ্রামের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু এখানে কোনো স্থায়ী কনভেনশন সেন্টার কিংবা এক্সিবিশন সেন্টার নেই। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বে-টার্মিনালের দক্ষিণ পার্শ্বে ২০ একর জায়গায় আন্তর্জাতিকমানের কনভেনশন সেন্টার ও বাংলাদেশ শো’কেস করার প্রস্তাব করেছি। একই সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মত চিটাগাং চেম্বারও তা বাস্তবায়ন করবে বলে আশা রাখছি। এ বিষয়টিও মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।’
এম এ লতিফ বাণিজ্য নগরী হিসেবে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত, আধুনিক আবাসন এবং ট্রান্সপোর্টেশনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প মাস্টারপ্ল্যানে রাখার প্রস্তাব করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘আগের মাস্টারপ্ল্যানগুলো হয়েছে বিভিন্ন জরিপের শিট দেখে। কিন্তু এ মাস্টারপ্ল্যান করার আগে জনগণকে এবং স্টেকহোল্ডারদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলে আমরা একটি ভালো ও উন্নত মাস্টারপ্ল্যান উপহার দিতে পারবো আশা করছি।’
জহিরুল আলম দোভাষ জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে ২১টি খাল উদ্ধার এবং দখলমুক্ত করা হয়েছে। অন্য খালগুলো দখলমুক্ত করা হচ্ছে।
তিনি নতুন মাস্টারপ্ল্যানে পরিবেশবান্ধব আবাসন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এমআরটি (ম্যাস রিপিট ট্রানজিট) করার জন্য সার্ভে চলছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘সিডিএ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড এমআরটি করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’
সভাপতির বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে নদীর দক্ষিণ পাড়ে নতুন শহর গড়ে উঠছে। যেখানে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নভিত্তিক নগরায়ন হবে। এ লক্ষ্যে অনেকে জায়গা নিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি স্থাপনা নির্মাণ করছে। কিন্তু সিডিএ নতুন মাস্টারপ্ল্যানে নদীর ওপারকেও রাখা হয়েছে। ফলে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের পূর্বে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। কেননা নদীর এপাড়ে সিডিএ’র আওতাধীন বর্তমান নগরীতে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, সুনির্দিষ্ট যানবাহনের টার্মিনাল না থাকার এবং জোনভিত্তিক শিল্পায়ন ও নগরায়ন না হওয়ার ফলে সুপরিকল্পিত নগরী গড়ে ওঠেনি। তাই আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে যে শিল্পায়ন ও নগরায়ন হচ্ছে তা হবে পরিকল্পিত ও দৃষ্টিনন্দন।’
এছাড়া নতুন মাস্টারপ্ল্যানে চট্টগ্রাম নগরীকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে কয়েকটি স্থানে স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, বিজিএমইএ’র ১ম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বিএসআরএম গ্রুপ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহুসেইন, চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক আমিরুল হক, দি পেনিনসুলা চট্টগ্রাম’র চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল, আইএবি-চট্টগ্রাম চেয়ারম্যান স্থপতি আশিক ইমরান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ’র প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য জাফর আলম, লুব-রেফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, চেম্বার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন ও মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ইসা আনসারী, বিকেএমইএ’র পরিচালক ফৌজুল ইমরান খান, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, আজীদ’র চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিউর রহমান টিপু, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন’র সহসভাপতি মো. রেজা উদ্দিন খান, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) নুরুল আজম খান, রিহ্যাব পরিচালক মাহবুব সোবহান জালাল তানভীর বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, মাহবুবুল হক মিয়া, ওমর মুক্তাদির, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক।