নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি »
রণ জয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গন এখন খুশীতে উন্মাতাল। দেশে যখন নারীর চলন-বলন-ধরন-পরিচ্ছদ নিয়ে একটা বৈরি সময়; ঠিক সে সময়ে এই বিজয় নারীর অগ্রযাত্রার পথে যেনো এক নবতরো সংযোজন। এই জয়ের সাথে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনী এবং লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার মনিকা চাকমা’র নামও জড়িয়ে আছে কৃতিত্বের মোড়কে।
কিন্তু যেই যমজ বোনের কৃতিত্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, সেই দুই বোনের বাড়ি যাওয়ার পথ যেনো মরণফাঁদ।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সাতভাইয়াপাড়ায় আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনীদের বাড়ি। ভৌগলিকভাবে শহরতলীতে হলেও তাদের গ্রামটি একেবারেই দুর্গম। পিচঢালা পথ যেতে যেতে ইটের রাস্তা পেরিয়ে সরু-কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এক সাঁকো পেরিয়ে তাদের বাড়ি যেতে হয়।
আনাই-আনুচিংয়ের বৌদি আরুই ও উ¤্রা মগ জানান, পুরো বর্ষাকাল জুড়েই ভয়ে থাকি। ১০/১৫ ফুট গভীর খালটিতে পড়ে গেলে মৃত্যু ছাড়া যেনো আর রক্ষে নেই। কতো নেতা-চেয়ারম্যান এসে কথা দিয়ে গেছেন, কিন্তু সাঁকোর পরিবর্তন হয়নি।
আনাই-আনুচিংয়ের দুই বড়ো ভাই মংক্রচাই মগ পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি জানালেন, বোনদের গর্বে তারা সব সময় আনন্দে থাকেন। মা-বাবারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের বাড়ির প্রবেশ পথের রাস্তাটি যেমন খারাপ তেমনি খারাপ বাড়ির পাশের ছড়ার পানি পরিস্থিতিও। বর্ষাকালে দশ/পনের ফুট গভীর এই ছড়াটির ওপর একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাফেরা করতে হয়।
আনাই-আনুচিংয়ের মা-বাবা আপ্রুমা মগিনী ও রিপ্রুচাই মগ বলেন, দুই মেয়ে আজ দেশের গর্বে পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসক আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন।
তারা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাড়িসংলগ্ন খালের ওপর সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সেতু নির্মাণের কথা দিয়েছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। কিন্তু কখন হবে জানি না।
খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা জানান, খেলোয়ারি কৃতিত্বের জন্য জেলা প্রশাসন নজিরবিহীন সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে জেলা প্রশাক প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস নারীদের ক্রীড়া উন্নয়নে খাগড়াছড়িকে দৃশ্যমান অগ্রগতির পথে নিয়ে গেছেন।
তিনিও ‘আনাই-আনুচিং’দের বাড়ি সংলগ্ন সেতুটি দ্রুত নির্মাণ হওয়া জরুরি বলে মত দেন।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস জানান, আনাই-আনুচিং মগিনী এবং লক্ষ্মীছড়ির মনিকা চাকমা’র বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। তাদের মা-বাবা স্বজন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যা জেনেছি। সেই মতে সরকারি অর্থায়নে জেলা প্রশাসন প্রতিশ্রুত মনিকা চাকমা’র বাড়ি নির্মাণ ও বিদ্যুতায়ন, আনাই-আনুচিংদের বাড়িতে গভীর নলকূপ, বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। আগেই তাদের তিনজনকে দুই লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র করে দেয়া হয়েছে। এবার আরো এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। সহকারী কোচ তৃষ্ণা চাকমাকেও এক লাখ টাকা দেয়া হবে।
তিনি ‘আনাই-আনুচিং’দের বাড়ি যাওয়ার পথে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।