সাত বছরে মৃত্যু ১৭ হাতির
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল কালীপুর গভীর জঙ্গলে গত রোববার (১৭ এপ্রিল) বিকালে আবারো মৃত হাতির শাবক পাওয়া গেছে। শাবকটি ৭/৮দিন আগে মারা গেলেও বনপ্রহরী কিংবা বনবিট কর্মকর্তা কেউ জানেন না। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের ভাষায়, মারা যাবার ৭দিন পর মৃত হাতির শাবকটি উদ্ধার করে বনবিভাগ ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ময়নাতদন্তের জন্য সুরতহাল সংগ্রহ করে ওই পাহাড়ে হাতির শাবক মাটিচাপা দিয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের লটমনি পাহাড়ে দুষ্কৃতকারীরা একটি হাতিকে মেরে মাটিচাপা দিয়েছিল। ওই ব্যাপারে মামলা হবার পর বাঁশখালীতে হাতির মৃত্যু সংবাদ ৫ মাস বন্ধ ছিল। এই নিয়ে বাঁশখালীতে গত ৭ বছরে ১৭টি হাতি মারা গেল।
বাঁশখালীর বনাঞ্চল ঘেঁষে কালীপুর রেঞ্জে লটমনি পাহাড়ের ভিতর বাঁশখালী-সাতকানিয়া অংশে ৬টি ইটভাটা স্থাপন হলেও বন কর্মকর্তাদের বাধা নেই। এমনকি ইটভাটার মালিককে বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইটভাটা স্থাপনে অনুমতি দেয়ারও মত নজির পাওয়া গেছে। গত ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম ভারপ্রাপ্ত এডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক ইটভাটার মালিক এক মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো. সফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তাতে লেখা আছে ইটভাটা থেকে ২ কিলোমিটার দূরত্বে কোন পাহাড় নেই। অথচ পাহাড় ঘেঁষে ইটভাটা। এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে হাইকোর্টের কয়েকদফা নির্দেশনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানে দায়সারা ভাব।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, লটমনি পাহাড়ের কোন ইটভাটার মালিককে এ ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছেন কিনা তা তাঁর জানা নেই। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
বনবিভাগের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত ৭ বছরে বাঁশখালীর বনাঞ্চলে মারা গেছে ১৭টি হাতি। গত ৭ বছরে কালীপুর রেঞ্জে মারা গেছে ১১টি বন্যহাতি। জলদী ও পুঁইছড়ি রেঞ্জে ৬টি। কালীপুর রেঞ্জের ২০৭৭.১৭ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বনের ভিতর নির্মাণ করা হয়েছে ৬টি ইটভাটা। অসুস্থ হয়ে পড়া ৩টি হাতিকে সুস্থ করে বনাঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল কালীপুরের গভীর জঙ্গলে মৃত হাতির শাবক পাওয়া গেছে। এর আগে ৪ মাস আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নে লটমনি পাহাড়ে ১টি হাতিকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয় দুস্কৃতকারীরা এবং ১২ নভেম্বর বাঁশখালীর চাম্বল বনবিট অফিসের অদূরে আরও ১টি হাতি মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল।
বনবিভাগের কালীপুর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জঙ্গল কালীপুরের পাহাড়ে উদ্ধার হওয়া মৃত হাতির শাবকটি ময়নাতদন্ত শেষে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। হাতি শাবকটি কখন মারা গিয়েছে কোন বনবিট কর্মকর্তা নিশ্চিত নন। তবে ময়নাতদন্তে নিয়োজিত প্রাণী সম্পদের অধীনস্থ ডাক্তাররা জানিয়েছেন কমপক্ষে ৭দিন আগে হাতি শাবকটি মারা গেছে।
বাঁশখালী উপজেলা সহকারী প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা অজিন চক্রবর্তী বলেন, গভীর জঙ্গলে মৃত হাতি শাবকটি পাওয়ার পর ময়নাতদন্তের জন্য সুরতহাল সংগ্রহ করেছি। ধারণা করা হচ্ছে পাহাড়ের ঢালু থেকে পড়ে শাবকটি মারা গেছে। শরীরে পচন ধরেছে। আনুমানিক ৭দিন আগে মারা গেছে।
বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘ হাতি জাতীয় সম্পদ। অনেক মৃত হাতির ময়নাতদন্ত করেছি। প্রকৃতভাবে এভাবে ময়নাতদন্ত কিছুতেই হাতি মৃত্যুর রহস্য বের হবে না। হাতির ময়নাতদন্ত আমরা শুধু চোখ দেখা পর্যবেক্ষণের ওপর রিপোর্ট দিই। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার সিনিয়র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছ থেকেও পরার্মশ নিই। তাতে আমিও সন্তুষ্ট নই। হাতির মৃত্যু রহস্য বের করতে বনবিভাগকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। হাতি মারা যাবার পর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা করার মতো যন্ত্র, সরঞ্জাম ও রাসানিক উপকরণ থাকতে হবে। দায়সারা পরীক্ষা হয় বলে হাতি মৃত্যুর রহস্য বের হচ্ছে না। এভাবে চললে ভবিষ্যতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হাতি শূন্য হয়ে পড়বে।’