প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে সক্ষমতার বিকল্প নেই, আর এই সক্ষমতা নির্ভর করে যথোপযুক্ত পরিকল্পনা, দক্ষ বাস্তবায়ন ও আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, বিদ্যমান সুযোগÑসুবিধা কাজে লাগিয়ে দ্রুত বিশ্বমানে পৌঁছানোর ওপর। বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দরের বহুমুখি কার্যক্রম নিয়ে, যেগুলি এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। কয়েক ধাপ এগিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ১০০টি আধুনিক বন্দরের মধ্যে এখন ৫৮তম স্থানে।
আমরা আশা করছি বন্দরের চলমান প্রকল্পগুলি শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের এই অবস্থান আরো এগিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) নির্মাণ কাজ হয়েছে। এখন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ চলছে। চিটাগাং ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীরে ১২০০ মিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে এই টার্মিনাল স্থাপনের কাজ চলছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আগামী জুনে টার্মিনাল চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংবাদ মাধ্যমে। এটি চালু হলে বন্দরের অপারেশন কার্যক্রমে আরো গতি আসবে বলে তিনি মনে করেন।
নদীতীরবর্তী এই টার্মিনালে একটি ডলফিন জেটি ও কন্টেইনার জাহাজ ভেড়ানোর ৩টি জেটি নির্মিত হবে। নদীর ভেতরের অংশে জেটি নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। জাহাজ থেকে কন্টেইনার রেলওয়ের মাধ্যমে সংলগ্ন ১৬ একর জায়গায় নির্মিতব্য ইয়ার্ডে নিয়ে আসা হবে। ফলে মূল টার্মিনালে কন্টেইনার জট হবে না। টার্মিনালের ভেতর দিয়ে বিমানবন্দরমুখি যোগাযোগের জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। প্রস্তাবিত জেটিগুলি দিয়ে ৪ লাখ ৪৫ হাজার একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। বন্দরের মূল জেটির সাথে কন্টেইনার পরিবহনের জন্য পৃথক রেললাইন থাকবে। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল যেখানে নির্মিত হচ্ছে সে এলাকায় নদীর গভীরতা বেশি থাকায় সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।
করোনার মধ্যেও আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলি গতি পেয়েছে, জীবন ও জীবিকার এই যৌথ সংগ্রামে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের রপ্তানি বাড়ছে, তৈরি পোশাক শিল্পও সম্ভাবনা দেখছে। এই খাতের প্রায় সকল আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম এই বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগের ও উন্নতি ঘটছে।
আমাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের চলমান প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বেÑটার্মিনাল, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পও পাইপ লাইনে রয়েছে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ একর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে, এর ফলে বন্দরের আন্তর্জাতিক অবস্থান উন্নত হয়েছে।
আমরা আশাকরি, বন্দরের এই গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। প্রাকৃতিকভাবে কর্ণফুলীর মোহনায় গড়ে ওঠা এই বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র, তাই কর্ণফুলীকে সকল প্রকার দখল দূষণ থেকে রক্ষা করে এর নাব্যতা বাড়াতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সচেষ্ট হবে।
মতামত সম্পাদকীয়