দেশে বায়ুদূষণজনিত রোগে মৃত্যু বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত রোগে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলম্বিয়া ও হেলথ ইফেক্ট ইনস্টিটিউট এর বিশ্ব বায়ু পরিস্থিতি ‘২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ২০ শতাংশ শিশশুর মৃত্যু ঘটে বায়ুদূষণজনিত নানা রোগে। এর মধ্যে ৬২ শতাংশের মৃত্যু হয় ঘরের ভেতরের দূষিত বায়ুর কারণে। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত রোগে মৃত্যুর বাড়ছে। শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহর হিসেবে ঢাকাকে দেখানো হয়েছে তৃতীয় স্থানে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বায়ুদূষণের দ্রুত অবনতি হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশে।
বিশ্ব বায়ু পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে সব দেশে বায়ুর মানের অবনতি ঘটছে সে সব দেশে করোনা সংক্রমণ দ্রুত হবে। শীতকালে আমাদের দেশে নানা কারণে বায়ু বেশি দূষিত হয়। করোনা সংক্রমণ ও বায়ুদূষণকে তাই সামগ্রিকভাবে দেখার কথা বলা হয়েছে।
আমাদের দেশে বায়ুদূষণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে প্রধানত ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া, গ্রামাঞ্চলে লাকড়ি ও গোবর ঘুটিতে রান্না, শহরে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য উন্মুক্তভাবে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার কারণে। দেশের ইটভাটাগুলি বায়ুদূষণের প্রধান উৎস। ইটভাটাগুলি বনাঞ্চলের কাঠ পুড়িয়ে প্রধানত ইট তৈরি করছে। সরকার অবৈধ ইটভাটা কিছু গত বছর বন্ধ করেছে। ইটভাটা আবাসিক এলাকায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। রান্নাঘর সাধারণত বদ্ধ হওয়া, বিষাক্ত ধোঁয়ায়, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যের বেশি ক্ষতি করে বিশেষত শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেশি দেখা দেয়। শহরাঞ্চলে যানবাহনের কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। পুরনো যানবাহন ও ট্রাক হতে বিষাক্ত ধোঁয়ার উদগীরণ ঘটে। রাস্তা খোঁড়াখুড়ির ধুলাবালি, উন্মুক্ত নির্মাণসামগ্রী বায়ুকে প্রচ-ভাবে দূষিত করে। দেশের বড় শহরগুলিতে বায়ুর মানের প্রতিনিয়ত অবনতি ঘটছে। অন্যদিকে নিয়মিত বনাঞ্চল ও বৃক্ষ ধ্বংসের কারণে নির্মল বায়ুর সতেজ নিঃশ্বাস নেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। উচ্চ আদালত বায়ুদূষণ রোধে বেশ কিছু নির্দেশনা দিলেও সেগুলির প্রতিপালনে উদ্যোগ তেমন নেই। আমাদের দেশে পরিবেশ বিষয়ক নানা আইন আছে কিন্তু এসবের কার্যকর প্রয়োগ খুবই কম। দেশের সকল জেলা শহরে পরিবেশ আদালতও নেই। শুকনো মৌসুমে নির্মাণকাজ, খোঁড়াখুড়ি, ইট উৎপাদন বেড়ে যায় এ সময় ধুলাবালি গৃহস্থালী বর্জ্য, শুকনো বর্জ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। দেশে করোনার সংক্রমণ থাকায় বায়ুদূষণ পরিস্থিতি মানুষকে আরো অসহায় করে তুলবে। সুতরাং বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। ইটভাটাগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে এগুলি পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে না ওঠে।
শহরের রাস্তাগুলিতে নিয়মিত পানি ছিটানো আবশ্যকীয় কাজ হওয়া উচিত এসময়। নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্ত না রেখে ঢেকে রাখতে হবে। বৃক্ষরোপণকে ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের অবশ্য করণীয় করে তুলতে হবে। যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। গ্রামাঞ্চলে রান্না করার সময় ধোঁয়া যাতে সহজে বেরিয়ে যেতে পারে তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে বায়ুদূষণ করোনা পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে পরিবেশকে নির্মল ও সতেজ রাখা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে প্রাধান্য দিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
মতামত সম্পাদকীয়