সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার এবং সেরা ওপেনার তিনি। তামিম ইকবালকে ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস কল্পনাও করা যাবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে সমীহ জাগানিয়া জায়গায় তুলে আনতে যে অল্প কয়েকজন ক্রিকেটারের অসামান্য অবদান রয়েছে, তার মধ্যে তামিম ইকবাল একজন। ২০০৭ সালে ক্যারিয়ার শুরু করার পর গত ১৬টি বছর বেশ দাপটের সঙ্গেই এ দেশের ক্রিকেটকে শাসন করে গেছেন চট্টগ্রামের ছেলে তামিম। কিন্তু সম্প্রতি ফর্ম ভালো যাচ্ছিলো না। ইনজুরিতে বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন। ফিটনেস ভালো নয়। সব মিলিয়ে দলের কোচ এবং বোর্ড কর্মকর্তাদেরও রোষানলে পড়েছেন তিনি। যে কারণে তামিম ইকবাল হঠাৎ করেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন। গতকাল (৬ জুলাই) নিজ শহরে সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে দেন, ‘এটাই অবসর নেয়ার সেরা সময়।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেলো তামিম ইকবাল অধ্যায়। তামিম ইকবালের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কিছু তথ্য ও পরিসংখ্যান: অভিষেক-ওয়ানডে: ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, হারারে স্পোর্টস ক্লাবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে, টেস্ট: ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি, ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, টি-টোয়ন্টি: ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর, নাইরোবির জিমখানা স্টেডিয়ামে কেনিয়ার বিরুদ্ধে, ব্যাটিং রেকর্ড (ম্যাচ, রান, গড়, সর্বোচ্চ, সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি)- ওয়ানডে: ২৪১ ম্যাচ, ৮৩১৩ রান, সর্বোচ্চ ১৫৮ রান, গড় ৩৬.৬২, স্ট্রাইক রেট ৭৮.৫৪, ১৫ সেঞ্চুরি এবং ৫৬ হাফ সেঞ্চুরি, টেস্ট: ৭০ ম্যাচ, ৫১৩৪ রান, সর্বোচ্চ ২০৬ রান, গড় ৩৮.৩৯, সেঞ্চুরি ১০টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ৩১টি, টি-টোয়েন্টি: ৭৮ ম্যাচ, ১৭৫৮ রান, সর্বোচ্চ ১০৩*, গড় ২৪.০৮, স্ট্রাইক রেট ১১৬.৯৬, ১টি সেঞ্চুরি এবং ৭টি হাফ সেঞ্চুরি, ফিল্ডিং রেকর্ড- টেস্ট: ২০টি ক্যাচ, ওয়ানডে: ৬৮টি ক্যাচ (বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ), টি-টোয়েন্টি ১৮টি ক্যাচ, বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড-সর্বমোট রান: * টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল। তার চেয়ে ১৬ টেস্ট বেশি খেলে এগিয়ে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম (৫৫৫৩ রান), * ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল। তার সংগ্রহ ৮৩১৩ রান। ৭১৮৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম, * টি-টোয়েন্টি তামিম ইকবাল তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তিনি ৭৪ ম্যাচে করেছেন ১৭০১ রান। ২১২২ রান নিয়ে দ্বিতীয় সাথে মাহমুদুল্লাহ এবং ২৩৪৫ রান নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন সাকিব আল হাসান, এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান- * টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০৬ রান করে তামিম ইকবাল রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। অপরাজিত ২১৯ রান করেন মুশফিকুর রহিম। ২১৭ রান করে দ্বিতীয় স্থানে সাকিব আল হাসান। * ওয়ানডেতে ১৫৮ রান করে এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রাহক তামিম। ১৭৬ রান করে শীর্ষে রয়েছেন লিটন দাস। * টি-টোয়েন্টিতে তামিমের সর্বোচ্চ সংগ্রহ অপরাজিত ১০৩ রান। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরির মালিকও তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৮* রানও এসেছে তার ব্যাট থেকে। সেঞ্চুরিÑ * টেস্টে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ১০টি। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি করা ব্যাটার। সর্বোচ্চ ১২টি সেঞ্চুরি রয়েছে মুমিনুল হকের। ১০টি সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিমও। * ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৪টি সেঞ্চুরি তামিম ইকবালের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯টি করে সেঞ্চুরি সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের। * টি-টোয়েন্টিতে তো মাত্র একটি সেঞ্চুরির মালিক বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তাও সেটা এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। হাফ সেঞ্চুরি- * টেস্টে সর্বোচ্চ ৪১টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তামিমের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে সাকিব আল হাসানের। * ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৬৫টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে সাকিব আল হাসানের। * টি-টোয়েন্টিতে ৭টি হাফ সেঞ্চুরি তামিমের। ১২টি হাফ সেঞ্চুরি করেন সাকিব আল হাসার। লিটনের রয়েছে ১০টি হাফ সেঞ্চুরি। পার্টনারশিপ রেকর্ড- * টেস্ট: ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খুলনায় প্রথম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ৩১২ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস।
* ওয়ানডে: ২০২০ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেটে ২৯২ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। * টি-টোয়েন্টি: ২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ১৩২* রান করেন তামিম ইকবাল এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড- টেস্ট: ১ ম্যাচ, জয়: নাই, পরাজয়: ১, ওয়ানডে: ৩৭ ম্যাচ, জয়: ২১, পরাজয়: ১৪, ফল হয়নি: ২, বিশ্ব রেকর্ড- * ওয়ানডে ক্রিকেটে কোনো নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার রেকর্ড তামিম ইকবালের। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৮৫ ম্যাচ খেলে ২৮৫৩ রান করেন তিনি। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ৫টি। মজার বিষয় হলো, এ তালিকায় সেরা তিনটি নামই বাংলাদেশের। তামিমের পর রয়েছেন মুশফিকুর রহিম (৯৫ ম্যাচে ২৬৬৬ রান) এবং সাকিব আল হাসান (৮৯ ম্যাচে ২৬৫৬ রান)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে সনৎ জয়সুরিয়ার। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তিনি করেছেন ৭১ ম্যাচে ২৫১৪ রান। * ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট (টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি) মিলিয়ে এক ভেন্যুতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। মিরপুর শেরে বাংলায় ১২২ ম্যাচে তিনি করেছেন ৪৪৮৫ রান। এখানেই কাকতালীয়ভাবে সেরা তিনটি নাম বাংলাদেশের। শীর্ষে মুশফিক (১৫২ ম্যাচে ৪৮৯৪ রান), দ্বিতীয় স্থানে সাকিব (১৪২ ম্যাচে ৪৭৬৪ রান), চতুর্থ স্থানে জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডন টেলর। হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে তিনি ৮৩ ম্যাচে করেছেন ৩৫০৩ রান। * ওয়ানডে ক্রিকেটে ৬ষ্ঠ সর্বকনিষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি রয়েছে তামিমের। ২০০৮ সালে মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯ বছর ২দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সেদিন তার ব্যাট থেকে এসেছিলো ১২৯ রান। * ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম উইকেট জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। ২০২০ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেটে ২৯২ রান করেছিলেন তারা। ৩৬৫ রান নিয়ে শীর্ষে রয়েছে জন ক্যাম্পবেল এবং শাই হোপ জুটি। ৩০৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইমাম-উল হক এবং ফাখর জামান জুটি। অন্যান্য রেকর্ড- * ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন তামিম ইকআল। ১৮বার আউট হয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন, * বাংলাদেশ দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট খেলা ক্রিকেটার তামিম (৭০টি)। সর্বোচ্চ ৮৬টি খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। * বাংলাদেশ দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার তামিম (২৪১টি)। সর্বোচ্চ ২৪৯টি খেলেছেন মুশফিক। * একই টেস্টে সেঞ্চুরি এবং শূন্য রানের রেকর্ড রয়েছে তামিমের। ২০১০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে শূন্য করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১৫১ রান। খবর জাগোনিউজ’র