রিমন সাখাওয়াত »
একটি ভালো বইয়ের কখনো শেষ বলতে কিছু নেই তবুও বই পোকার পিপাসা মেটাতে ভিন্ন বই প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা অনেকাংশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি পুরনো বইয়ের বিনিময়ে অন্য একটি বই পাওয়া যায়? এমন প্রশ্নের সহজ সমাধান মিলেছে নগরীর জামালখানে আয়োজিত বই বিনিময় উৎসবে।
ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে এসেছে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস অন্নি। তার নজর একাডেমিক বইয়ে। অষ্টম শ্রেণী বোর্ড বই ও গাইড দিয়ে নবম শ্রেণীর বিভিন্ন প্রশ্ন পত্রের বই, ব্যাকরণ ও গাইড বই পরিবর্তন করে নিয়েছে। কিন্তু চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তার আরও কিছু প্রয়োজন। এখনও বইয়ের পিপাসা মেটেনি তার। স্টলের পাশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত। চোখ নবাগত বইয়ের দিকে। বই বিনিময় শেষ তারপরও কেন দাঁড়িয়ে আছে জানতে চাইলে অন্নি বলে, ‘ইংরেজি ব্যাকরণের বই প্রয়োজন। কিন্তু এখনও পাইনি। অনেকে আসছে কিন্তু প্রয়োজনীয় বইটি কেউ নিয়ে আসেনি। অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি, অপেক্ষার ফল মিষ্টি হবে। তবে অন্য প্রয়োজনীয় বই পেয়ে গেছি।’
গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী নগরীর জামালখান মোড়ে ‘ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ’ এর দ্বিতীয় বারের মত আয়োজিত বই বিনিময় উৎসবে দেখা মেলে এমন চিত্র। বই প্রেমীদের ঢল নেমেছে এ আয়োজনে। এ উৎসব শিশু, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সী ও শ্রেণী পেশার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডা. খাস্তগীর স্কুলের সামনে রাস্তার দু’পাড়ের ফুটপাতে ১২টি ক্যাটাগরিতে সাজানো হয়েছে ১৩টি বইয়ের স্টল। সকাল নয়টা থেকে শুরু হয় বই বিনিময় উৎসবের এ আয়োজন। শুরু থেকেই বেশ উজ্জীবিত দেখা গেছে এ আয়োজন। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে বই বিনিময়ে সহায়তা করছে স্বেচ্ছাসেবীরা। বেলা গড়াতেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। হৈ-চৈ আনন্দে বন্ধুদের সাথে বই বিনিময় উৎসবে যোগ দিয়েছে স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও। বই বিনিময় উৎসব যেন এক নতুন আগামীর বার্তা বয়ে এনেছে।
বছরে অন্তত তিনবার বই বিনিময় উৎসব হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন পার্থ বড়ুয়া নামে এক বই প্রেমী। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বই মেলা হয়। এতে নতুন নতুন বই কিনে বই প্রেমীরা। কিন্তু বই বিনিময় উৎসব একটি ভিন্নধর্মী আয়োজন। এটি ভাল একটি উদ্যোগ। বই মেলা থেকে বিভিন্নজনে বিভিন্ন বই কিনে। কিন্তু পড়া শেষে সেই বই পড়ে থাকে সেল্ফে। ঘরোয়া সেল্ফে এসব বই সাজিয়ে না রেখে এভাবে হাত বদল হলে মানুষের জ্ঞানের পরিধি যেমন বাড়বে তেমনই বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে সকলের।’
একাডেমিক বইয়ের পরিবর্তে চাকুরী নিয়োগের গাইড নিতে এসেছেন মাস্টার্স পাস করা সুমাইয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা শেষে যেসব বই প্রয়োজন হচ্ছে না সেসব বই দিয়ে চাকুরীর পড়ালেখার জন্য বিভিন্ন সাজেশন বই নিয়েছে। তবে টাকা ছাড়া বইয়ের পরিবর্তে বই পাওয়া এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। এমন মহতী উদ্যোগ যেন বছরে আরও কয়েকবার করতে পারে সেই জন্য উৎসবের আয়োজক কমিটিকে শুভ কামনা জানাই।’
বই বিনিময় করার নিয়ম
বই বিনিময় উৎসবে প্রথমত রেজিস্ট্রেশন বুথে বই জমা দিতে হবে। এরপর জমা দেওয়া বইয়ের ক্যাটাগরি অনুযায়ী স্টল নম্বর লিখে দেয় দায়িত্বরত ভোলান্টিয়ার। সে অনুযায়ী স্টলে গিয়ে পছন্দমত বই সংগ্রহ করতে পারে যে কেউ। এতে একাডেমিক বইয়ের ক্যাটাগরি ছাড়া অন্য ক্যাটাগরির যে কোন ৫টি বই বিনিময় করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একাডেমিক বই বিনিময়ের ক্ষেত্রে রাখা হয়নি কোন নিয়ম। বইয়ের বিনিময়ে বই যত ইচ্ছা নেওয়া যাবে।
ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক ও বই বিনিময়ে উৎসবের সমন্বয়ক সায়্যিদ খান সাগর বলেন, ‘জেলা পরিষদের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম নগরে এবার দ্বিতীয় বারের মত বই বিনিময় উৎসবের এ আয়োজন করেছি। এ আয়োজনে সকল ক্যাটাগরির বই বিনিময় করা যাচ্ছে। পনেরো হাজার বই বিনিময়ের লক্ষ্যমাত্র নিয়ে বই বিনিময় উৎসব শুরু করেছি। কারণ গত বছরের উৎসবে ১০টি স্টলে ১০ হাজার ২৫৭টি বই বিনিময় হয়েছে। কিন্তু এবারের আয়োজনে লক্ষ্যমাত্রা ভেদ করে ২০ হাজার ৭৪টি বই বিনিময় হয়েছে। যা আমাদের আনন্দে নতুন মাত্র যোগ করেছে। এ বছর এর পরিসর কিছুটা বড় করা হয়েছে। বই বিনিময় উৎসবের সফলতার জন্য ২১ জন এক্সিকিউটিভ মেম্বারসহ ১২০ জন স্বেচ্ছাসেবক অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।’
বই ছাড়া বই নেওয়ার কোন সুযোগ ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হত দরিদ্র শিক্ষার্থী যারা তাদের জন্য একাডেমিক বই বিনিময় ছাড়া নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।’