সুপ্রভাত ডেস্ক
প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-আইলেট।
তাদের দৃষ্টিতে ‘যুগান্তকারী’ এই আবিষ্কার পাল্টে দেবে বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের চিত্রকে। উপযুক্ত বিনিয়োগ ও সরকারি সহায়তা পেলে দুই বছরের মধ্যে ট্যানারিগুলো বহুল প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক পরিবেশগত সনদ অর্জন করতে পারবে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে। খবর বিডিনিউজের।
ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে একটি এনজাইম ব্যবহার করে চামড়া পক্রিয়াজাতকরণ করা হবে, তাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে। পাশাপাশি ব্যয়ও সাশ্রয় হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে গত বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরেন আইলেটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আইলেটের এই যৌথ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মিজানুর রহমান বলেন, উদ্ভাবিত প্রক্রিয়ায় চামড়ার গুণগত মানোন্নয়ন ছাড়াও ট্যানারির তরল বর্জ্যে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্রোমিয়ামের পরিমাণ ৯০ শতাংশ হ্রাস পাবে। অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।
‘এ প্রক্রিয়ায় নির্গত তরল বর্জ্যও বাহ্যিকভাবে অনেকটাই স্বচ্ছ, যা দৃশ্যমান হবে। উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ৩০ শতাংশ রাসায়নিক খরচ এবং ৫০ শতাংশেরও বেশি তরল বর্জ্য পরিশোধন ব্যয় হ্রাস পাবে। এর ফলে ট্যানারির তরল বর্জ্য পরিশোধন পদ্ধতিও সহজ হবে।’
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের চামড়া শিল্প হতে রপ্তানি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে মন্তব্য করে এই গবেষক বলেন, এ শিল্প খাতে রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ হল বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ প্রাপ্ত নয়। এই সনদ পাওয়ার পথে মূল বাধা হল পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করা, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব।
‘ট্যানারি শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ২০২১ সাল হতে আমরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করেছি। উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত ফিনিশড লেদার দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অধিকতর গুণগত মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।’
উদ্ভাবিত এ পদ্ধতি ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে পেটেন্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
গবেষণাগারের পাশাপাশি প্রগতি ট্যানারিতে বাণিজ্যিকভাবেও সফলভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেছে বলে জানান মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ক্রোমযুক্ত ট্যানারির কঠিন বর্জ্য (শেডিং ডাস্ট) থেকে ইতোমধ্যে লেদার শেভিং বোর্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে সফলভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যা বাজারে প্রচলিত পার্টিকেল বোর্ডের চেয়ে অধিকতর গুণগত মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী।
এতে করে পোলট্রিফিড, ফিশফিড, ব্রিকফিল্ড ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ক্ষতিকর ক্রোম শেভিং ডাস্টের অনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণও রোধ হবে।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে একটি নতুন জ্ঞান সৃষ্টি; এবং সেই জ্ঞান সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া। সে লক্ষ্যে আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
‘প্রথমবারের মত আইলেট এনজাইম ব্যবহার করে ক্রোমিয়াম সালফেট কম ব্যবহার করে লেদার ট্যানিংয়ের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ক্রোমিয়াম ব্যবহার করতেই হবে, তবে নতুন এই উদ্ভাবনে তা ৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে।’
সেমিনারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. নুরুজ্জামান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বক্তব্য দেন।