নিজস্ব প্রতিবেদক »
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ভোটযুদ্ধে নামছেন ১২০ জন প্রার্থী। এরমধ্যে প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৬ জনকে ঈগল, ৪ জনকে কেটলি, ৩ জনকে ট্রাক, ২ জনকে ফুলকপি ও একজনকে তরমুজ ও একজনকে বেঞ্চ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনার ৬টি আসনের এবং জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে ১০টি আসনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জানা যায়, চট্টগ্রামে মোট ১৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরমধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে ৩২ জনের মনোনয়ন বাতিল করেন দুই রিটার্নিং অফিসার। বাদ পড়া প্রার্থীদের ১২ জন নির্বাচন কমিশনের আপিল করে এবং একজন উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পান। সবমিলে ১৬ আসনে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১২৯ জন। তাদের মধ্যে থেকে রোববার ৯ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে ভোটের মাঠে টিকে রয়েছেন ১২০ প্রার্থী।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী
আওয়ামী লীগ থেকে ১৬ জনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। সবার মনোনয়ন গ্রহণ করার পর থেকে নৌকা প্রতীক লড়তে প্রস্তুতি নেয় ১৬ প্রার্থী। কিন্তু প্রতীক পাওয়ার আগের দিন দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন চট্টগ্রাম-৫ আসনের প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুস সালাম এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ।
বাকি ১৪ প্রার্থী গতকাল (সোমবার) নিশ্চিত করেছেন নৌকা প্রতীক। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মাহবুব উর রহমান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু–আকবরশাহ-পাহাড়তলী) আসনে এস এম আল মামুন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী আংশিক) আসনে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে সাংসদ মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে সাংসদ মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন।
লাঙ্গল প্রতীকে লড়বেন
চট্টগ্রামে ১৬টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম ১১ ও ১৬ আসন বাদ দিয়ে ১৪ জন প্রার্থী ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম-৫ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী বসিয়ে সিট ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। ফলে ১২টি আসনে এ দলের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে লড়বেন। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে নামছেন চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে এমদাদ হোসাইন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মো. শফিউল আজম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে এমএ ছালাম, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু–আকবরশাহ-পাহাড়তলী) আসনে দিদারুল কবির, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে সফিকুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী আংশিক) আসনে মুছা আহমেদ রানা, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও ও বোয়ালখালী আংশিক) আসনে সোলায়মান আলম শেঠ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে সানজীদ রশীদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে জহুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নুরুচ্ছফা সরকার, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে আবদুর রব চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আবু জাফর মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে মোহাম্মদ ছালেম।
স্বতন্ত্র প্রার্থী
১২০ প্রার্থীর লড়াইয়ে কোনো দলের মনোনয়ন ছাড়াই নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন ১৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. মনজুর আলম কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত না হলেও বাকি ১২ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখনও সক্রিয় রয়েছেন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-৪, ৬, ৭, ৯, ১৩ আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। চট্টগ্রাম-১ আসনে ঈগল প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-২ তরমুজ প্রতীকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আবু তৈয়ব ও ঈগল প্রতীক নিয়ে মো. শাহজাহান, চট্টগ্রাম-৩ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা জামাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে কেটলি প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৮ আসনে কেটলি প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম ও ফুলকপি প্রতীকে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কৃষাণ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে ফুলকপি প্রতীকে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম ও কেটলি প্রতীকে সাবেক যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১১ আসনে কেটলি প্রতীকে চসিক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, চট্টগ্রাম-১২ আসনে ঈগল প্রতীকে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ট্রাক প্রতীকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ঈগল প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব এবং চট্টগ্রাম-১৬ আসনে ঈগল প্রতীকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান, ট্রাক প্রতীকে আবদুল্লাহ কবির ও বেঞ্চ প্রতীকে খালেকুজ্জান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়বেন। এছাড়া ৭৯ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে লড়বেন। তারা চেয়ার, মোমবাতি, একতারা, ফুলের মালা, টেলিভিশন, হাত (পাঞ্জা), আম, মশাল, সোনালী আঁশ, ডাব, নোঙ্গর, বটগাছ, হাতঘড়ি, ছড়ি, মিনার, উদীয়মান সূর্য, কুঁড়েঘর প্রতীক নিয়ে লড়বেন।
প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী প্রতীক নিয়েই প্রার্থীরা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালাতে পারবেন। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।