বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেছেন, চট্টগ্রাম জেলার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এটাকে নিয়ে আমাদের গর্বের সীমা নেই। পর্বত, নদী, সমুদ্র, লেক কি নেই চট্টগ্রামে। এখানে সুফি সাধকরা এসেছেন অনেক আগেই। যে জন্য বার আউলিয়ার দেশ বলা হয় চট্টগ্রামকে। সে হিসেবে ভালো ইতিহাস লেখা হয়নি। চিরন্তন চট্টগ্রাম নামটি বিবেচনা করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম চিরন্তন আছে, চিরন্তন থাকবে। তবে একাজের অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে যেন কোন ত্রুটি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি গতকাল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ভবনে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য কর্নার স্থাপনের নিমিত্তে গঠিত কমিটির দ্বিতীয় মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ যে হয়নি তা নয়। বাইরে থেকে যারা আসবে তারা যেন ৪০/৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা নিয়ে যেতে পারেন সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। কাজটি চমৎকারভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভায় সাবেক মুখ্যসচিব আবদুল করিম বলেন, আমলারা সরকারি কাজ ব্যতীত সামাজিক কাজ করতে পারে এটা সাধারণ মানুষ মনে করে না। সুযোগ পেলে তারাও কাজ করেন। এই উদ্যোগে চট্টগ্রামের সাবেক আমলাদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যদি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয় তখন এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। আসল চিত্র ভালোভাবে ফুটে উঠবে। তাতে চট্টগ্রাম সম্পর্কে মানুষের বুঝতেও সহজ হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কিন্তু এটি আমরা সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারিনি। চট্টগ্রামের বাইরে কিংবা দেশের বাইরে থেকে কোন ব্যক্তি এলে তা আমরা তাদের সামনে তুলে ধরতে পারি না। অথচ তারাও জানে, আমরাও জানি চট্টগ্রামের হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। এখন আমরা তা দেশ তথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি। সবার সহযোগিতায় একাজ সুসম্পন্ন হবে। প্রথমে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ টাওয়ারে ৮ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোরে চট্টগ্রাম ঐতিহ্য কর্নার স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি এই উদ্দেশ্যে জঙ্গল সলিমপুরে ৫ একর জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
ড. মাহবুবুল হক বলেন, এই পরিকল্পনা দেখে আমার বাঁচার সাধ আরো বেড়ে গেছে। বস্তুগত সংস্কৃতি বিপুল হারে বেড়ে গেছে। কিন্ত মানব সংস্কৃতিকে সেভাবে আমরা উৎসাহিত করতে পারিনি।
সালাউদ্দিন কাশেম খান এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তার কাছে যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে তা তিনি এখানে প্রদান করার ঘোষণা দেন। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, যে কাজটি শুরু করা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলোআপ মিটিংয়ের মাধ্যমে কাজকে এগিয়ে নিতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কমিটির সদস্যসচিব এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভার শুরুতে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল ঐতিহ্য কর্নার স্থাপনের নিমিত্তে গঠিত বিভিন্ন উপ কমিটির গঠন ও কার্যাবলী তুলে ধরেন।
ঢাকা থেকে জুমে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। উপস্থিত সকলেই চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন চুয়েট ভিসি ড. রফিকুল আলম, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এ এফ এম আওরঙ্গজেব, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. সেকান্দর চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ শামসুল হক, বিটিভি চট্টগ্রামের জিএম নুরুল আরশাদ রঞ্জু, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সভাপতি স্থপতি আশিক ইমরান, সাংবাদিক ডেইজি মওদুদ, পিপি অ্যডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, কবি ওমর কায়সার, কবি বিশ^জিত চৌধুরী, আজাদীর সহযোগী সম্পাদক রাশেদ রউফ, চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর সহযোগী সম্পাদক কামরুল হাসান, ইতিহাস গবেষক নেছার আহমদ, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, সাবেক অধ্যক্ষ রীতা দত্ত, নৃত্যশিল্পী প্রমা আবন্তি, সঙ্গীতশিল্পী সনজিত আচার্য্য, নাট্যকার সঞ্জীব বড়ুয়া, আলেক্স আলীম, সংস্কৃতি সংগঠক শাহরিয়ার খালেদ, হাসিনা খান, শিল্পী দিপক দত্ত, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম, প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপসচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেন প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি