লোকাল দোকানিদের হাতে জিম্মি ভ্রমণপিপাসুরা

পতেঙ্গা সৈকত

নিজস্ব প্রতিবেদক »

সময় পেলেই নগরের অদূরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ছুটে যান ভ্রমণপিপাসুরা। পরিবার-পরিজন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সময় কাটাতে চট্টগ্রামের এই সৈকতের রয়েছে বিশেষ অকর্ষণ। তবে বর্তমানে পতেঙ্গায় ঘুরতে আসা পর্যটকেরা কিছু অসাধু ও লোভী ব্যবসায়ীর কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। তারা সৈকতের বেড়িবাঁধের সীমানাদেয়াল দখল করে অস্থায়ী ছাউনি গড়ে তুলে খাবার বিক্রি করছেন। এতে সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা কোনোভাবেই আর বসার সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত তারা মানসিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন এদের কাছে। ভ্রাম্যমাণ ওইসব দোকানে খাবার না খেলে বসা তো দূরে থাক, দাঁড়াতেও দেয় না ওরা। এ নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন শহিদুল্লাহ কাউসার নামের এক ভ্রমণপিপাসু। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে ছুটির দিনে এখানে বিকেলটা কাটাতে এসেছিলাম। শরতের পড়ন্ত বিকেলের বর্ণিল আলো সমুদ্রের জলে অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন আমরা বেড়িবাঁধের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই। কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকানি আমাদের ওখানে দাঁড়াতে বাধা দেয়। তাদের দাবি, পাশের পাতানো চেয়ার-টেবিলে বসে তাদের দোকানের খাবার খেলেই কেবল এখানে বসা কিংবা দাঁড়ানো যাবে। কিন্তু তাদের পরিবেশন করা খাবারগুলো অস্বাস্থ্যকর মনে হওয়ায় আমরা সেসব খেতে রাজি হইনি। তাঁদের কথা, খাবার না খেয়ে যদি আমরা দাঁড়িয়ে থাকি তাহলে তাঁদের আগ্রহী পেয়িং কাস্টমাররা এখানে বসতে চাইবেন না। যেহেতু তাঁরা এসব দখলকৃত জায়গার জন্য প্রভাবশালীদের কাছে দৈনিক ৩শ, সাড়ে ৩শ টাকা হারে চাঁদা গুনছেন, তাই তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এসব শুনে পরিবার নিয়ে ওই স্থান ছেড়ে চলে যাই।’

মোহাম্মদ এনামুল নামের আরেকজন বললেন, ‘কয়েক মাস আগেও এখানে এসে বসতাম, আড্ডা দিতাম। বিকেলটা উপভোগ করতাম। কিন্তু এখন যেদিকেই বসি বা দাঁড়াই এসব দোকানিরা দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিতে চায়। ঘুরতে এসে এমন হেনস্তার শিকার হলে আর ভ্রমণের আনন্দটা থাকে? নগরের অদূরে সবচেয়ে ব্যস্ততম পর্যটনকেন্দ্র এটি। এসব অনিয়মের প্রতিকার করার যেন কেউ নেই এখানে। এত বড় এলাকাজুড়ে এখানে এতটা দখলদারিত্ব চলছে প্রশাসনের কি নজরে আসছে না এসব?’

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেলে জোয়ারের কারণে পানির স্তর বেড়ে দেয়ালের প্রান্ত ছুঁই-ছুঁই করছে। তাই বালুময় সৈকতে নামতে পারছেন না ঘুরতে আসা লোকজন। তাঁরা চাইছেন বেড়িবাঁধের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত, আকাশ আর সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। কিন্তু সৈকতে বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্যরে বেশির ভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। তাদের পাতানো পাস্টিকের লাল চেয়ার, টেবিল এবং ছাউনিসদৃশ ছাতার কারণে সেখানে বেশির ভাগ জায়গা দখল হয়ে গেছে। এতে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের হানি ঘটছে। কোথাও ক্লান্ত ভ্রমণকারী একটু জিরানোর জন্যে দাঁড়ালেই সেখানে এসে দখলদার দোকানিরা দুর্ব্যবহার করছেন তাঁদের কড়া কথা, দোকানের খাবার না খেলে সেখানে বসা এমনকি দাঁড়ানোও যাবে না। কেননা, ক্রেতাদের বসার ব্যবস্থা করতে জায়গার ভাড়া বাবদ দৈনিক তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা দিচ্ছেন!

এ অবস্থায় খাবার কিনতে না চাওয়ার কারণে বসতে বা দাঁড়াতে না পেরে অনেক পর্যটককে রাগ করে চলে যেতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. আফতাব হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা পর্যটক আসলে বসে। আবার চলে যায়। ওরা ওখানে থাকে না। তাছাড়া ওদের চেয়ার-টেবিলগুলো তো পর্যটকদের বসার জন্যেই। পর্যটকেরা তো খাবার খেতে যান সেখানে, খাবার খাবেন, বসবেন। চাঁদা কে নেয় ,কোনো নাম বলেছে তারা? আমার কাছে চাঁদা তোলার কোনো তথ্য নেই। পর্যটকেরাও কোনো অভিযোগ জানায়নি কখনও। এসব দেখাশোনার জন্য সেখানে পর্যটক পুলিশ আছেন।’

পতেঙ্গা জোনের পর্যটক পুলিশের ইনচার্জ ইসরাফিল মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সেভাবে জনবল নেই যে, এত বড় এলাকা তদারকি করতে পারি। আমরা এসে তাদেরকে এখানে বসা পাই। এই ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের উচ্ছেদের ব্যাপারে সে রকম কোনো ক্ষমতা রাখি না। উচ্ছেদ এবং শাস্তি হিসেবে অর্থদ- দেবার জন্য আমরা দুবার জেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছি। সর্বশেষ ১ মাস আগে জেলা প্রশাসক বরাবর একজন ম্যাজিট্রেট নিয়োগের জন্য আবেদন করেছি। তবে বসতে বা খেতে বাধ্য করলে কিংবা দাঁড়াতে না দিলে আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’