‘গুলিবিদ্ধ সিনহা চান পানি, লাথি দেন ওসি প্রদীপ’

সুপ্রভাত ডেস্ক »
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ৪নং সাক্ষী হিসেবে মো. কামাল হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তবে এদিন ৪ নম্বর সাক্ষী নিজেকে সিএনজি চালক প্রমাণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত।
বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মামলার অন্যতম সাক্ষী মো. কামাল হোসেন ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। টেকনাফ শামলাপুর পুলিশের চেকপোস্টে মেজর সিনহা হত্যার সংঘটিত ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি সবকিছু আদালতে বর্ণনা দিয়েছেন।
সাক্ষী মো. কামাল হোসেনের বাড়ি টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে খুন হন সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলেন।
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় কামাল হোসেন আদালতকে বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কের শাপলাপুর তল্লাশিচৌকির কাছে সিনহাকে যখন গুলি করা হয়, তখন আশপাশে ছিলেন তারা কয়েকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন গুলি খেয়ে সিনহা রাস্তায় পড়ে আছেন। কিছুক্ষণ পর টেকনাফের দিক থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি) ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সিনহার দিকে এগিয়ে যান। এ সময় সিনহা বাঁচার জন্য ‘পানি পানি’ করছিলেন। পানি না দিয়ে উল্টো সিনহার বুকে লাথি মারেন প্রদীপ। এরপর পা দিয়ে গলা চেপে ধরে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন প্রদীপ।
মামলাসংশ্লিষ্ট একাধিক আইনজীবী কামাল হোসেনের এই সাক্ষ্যের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘ ‘সোমবার দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে চতুর্থ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিচারাধীন কোনও মামলার আদালতের অভ্যন্তরীণ বিষয় প্রকাশ করা আইনের পরিপন্থী। তাই, মিডিয়ায় দেওয়ার মতো কোনও তথ্য নেই।’
এর আগে গত রবিবার মোহাম্মদ আলী নামে ৩নং সাক্ষীর আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এ ছাড়া গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিন দিন মামলার ১নং সাক্ষী ও বাদী শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেন আদালত।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদি হয়ে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।