ফারুক হোসেন সজীব »
এক গ্রামে হঠাৎ একটি কালো ঘোড়া এসে হাজির হলো। ঘোড়াটির শরীর ছিল কালো কুচকুচে। কিন্তু চোখ দুটি ছিল উজ্জ্বল গাঢ় লাল! গ্রামের সবাই ঘোড়াটিকে দেখেই ভীষণ ভয় পেয়ে যেত, কারণ ঘোড়াটির চোখে অদ্ভুত কিছু রহস্য লুকানো ছিল! কিন্তু কী সেই অদ্ভুত রহস্য?
একদিন গ্রামের এক ছোট্ট মেয়ে নাম তার নিতু। সে ভীষণ সাহসী। কারো বারণের তোয়াক্কাই সে করতো না! যেখানেই বারণ, সেখানেই গমন এমন মেয়ে নিতু! একদিন নিতু বেশ উৎসুক মনে সেই কালো ঘোড়াটির কাছে গেল। কিন্তু একি! নিতু তো একটুও ভয় পাচ্ছে না? বরং নিতু ঘোড়াটিকে দেখেই কী এক অদ্ভুত মায়ায় পড়ে গেল। কেন যেন নিতুর বারবার মনে হচ্ছিল, ইস্! সে যদি ঘোড়াটিকে একটু হাত বুলিয়ে আদর করতে পারতো? ভালোবাসতে পারতো?
হঠাৎ নিতু কী মনে করে ঘোড়াটিকে ঘাস খেতে দিল। ঘোড়াটি সবুজ আর সতেজ ঘাস পেয়ে খুব মজা করে খেল। তাই দেখে নিতু ভীষণ খুশি হলো! কিন্তু কী আশ্চর্য! ঘোড়াটি হঠাৎ কথা বলা শুরু করল।
ঘোড়াটি বলল, আমি কালো ঘোড়া! তুমি কে মিষ্টি মেয়ে?
আমি নিতু! এই গ্রামেই আমার বাড়ি। কিন্তু তুমি কথা বলতে পার?
ঘোড়াটি হো-হো করে হেসে বলল, পারি বৈকি! কেন তোমার কি সন্দেহ হচ্ছে?
না, সন্দেহ হবে কেন? তবে, ঘোড়াকে তো আমি কোনোদিন কথা বলতে শুনিনি তাই!
ও তাই বলো! যা আগে শোনোনি, তা কোন কালেই যে শুনবে না, এটা তো ঠিক না। এসো তোমাকে আমার পিঠে চড়িয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে দেখাই! সেকি! তোমার পিঠে চড়লে আমি যে পড়ে যাব! কালো ঘোড়াটি বলল, তুমি তো সাহসী মেয়ে! ভয় পেলে কেমন করে তুমি বিশ্ব জয় করবে শুনি?
নিতু আমতা আমতা করে বলল, তাই তো! তুমি ঠিকই বলেছ। ভয় পেলে চলবে না! মনে সাহস আনতে হবে।
ঘোড়াটি বলল, এজন্যই তো তোমাকে বলছি। পিঠে চড়ে বসো লক্ষ্মী মেয়ে! নিতু বলল, কিন্তু তুমি তো পাহাড়ের মতো উঁচু! আমি কীভাবে তোমার পিঠে চড়বো?
ঘোড়াটি হঠাৎ বসে পড়ল। নিতু ঘোড়ার পিঠে উঠে বসল। তারপর নিতু প্রথমে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াল। গ্রামের মানুষগুলো ঘোড়ার পিঠে নিতুকে দেখে ভীষণ অবাক বনে গেল! নিতু ঘোড়ার পিঠে চড়ে গাছপালা, পাহাড়, নদী, মরুভূমি সব কিছু দেখল।
নিতু বলল, আচ্ছা! কালো ঘোড়া! তুমি কি জাদু জানো? শুনে ঘোড়াটি বলল, জাদু বলতে তো কিছুই নেই!
তাহলে সবাই যে, তোমাকে মায়াবি ঘোড়া বলে? তুমি নাকি মায়াজাল সৃষ্টি করে সবাইকে ভয় দেখাও! এটা কি সত্যি?
ঘোড়াটি বলল, এটা মোটেই সত্যি নয়! আসলে আমার শরীরের রং কালো। আর কালো মানে তো অন্ধকার। মানুষ অন্ধকারকে ভয় পায়! কারণ অন্ধকারকে মানুষ জানতে চায় না। কিন্তু তুমি জানতে চেয়েছ! এজন্যই তো আমি তোমাকে আমার পিঠে চড়িয়েছি যেন, আমি তোমাকে জানাতে পারি, আমি আসলে ভয়ংকর কিছু নই! বুঝেছ?
শুনে নিতু বলল, ও তাই বুঝি! তাহলে আমি গ্রামের সবাইকে বলে দেব তুমি আসলে মায়াবি কিছু নও। তুমি কোন মায়াজাল সৃষ্টিও করো না। তুমি বড্ড ভালো ঘোড়া।
নিতুর কথা শুনে ঘোড়াটি বলল, তুমি পারবে? গ্রামের মানুষের এই ভুলগুলো ভেঙে দিতে?
নিতু বলল, পারব! আমাকে যে পারতেই হবে! তারপর নিতু গ্রামের সবাইকে কালো ঘোড়ার বিষয়ে বলল, শুনে সবাই ঘোড়াটির কাছে এলো। ঘোড়াটিকে সবুজ আর সতেজ ঘাস খেতে দিল। ধীরে ধীরে ঘোড়াটি গ্রামের সবার প্রিয় বন্ধু হয়ে গেল। সেই সাথে গ্রামবাসীরা এটাও বুঝতে পারল যে, মায়াজাল, মায়াবি বলতে কিছুই নেই! সমস্ত কিছুই মিথ্যা প্রচার মাত্র! আর আমাদের কারোই মিথ্যা প্রচারণা ও কুসংস্কারে কান দেওয়া উচিত নয়!