সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর স্থাপিত প্রায় শত বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে। ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় সংস্কার কাজ করছে রেলওয়ে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সরাসরি রেল চলাচলের লক্ষ্যে এই সেতু সংস্কার করা হচ্ছে। ফলে টানা তিন মাস সেতুটি পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেলে জানান, সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে কাজ শুরু করতে আরও ৭-৮ দিন সময় লাগতে পারে। সংস্কার কাজ শেষ করতে তিন মাস লাগতে পারে। এই সময়ে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন ও যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
আর সংস্কার কাজের সময় মানুষ ও যানবাহন চলাচলে সেতুর পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চলাচল শুরু করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, সংস্কার কাজ চলা অবস্থায় ফেরি সার্ভিস চালু থাকবে। ইতোমধ্যে দুটি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফেরিতে কোনো ধরনের যানবাহন থেকে কত টাকা ভাড়া রাখা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাতে সেতু মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে টোলের হার নির্ধারণ করার পর ফেরি সার্ভিস চালু হবে।
রেলওয়ে প্রকৌশলীরা জানান, প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেক্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সংস্কার করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্যমতে, ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ট্রেনের ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। এ সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। খবর ঢাকামেইল।
কিন্তু ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ভর হবে ১২-১৫ টন। ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৮০-১০০ কিলোমিটার। কালুরঘাট সেতুর বর্তমান অবস্থার কারণে এই গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। অন্তত ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আছে। এজন্য বুয়েটের পরামর্শক দলের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু সংস্কার করা হচ্ছে।
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের চলমান কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল শুরুর চিন্তা করছি আমরা। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৮২ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। রেললাইনের ওপর থাকা ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্টের কাজও শেষ হয়েছে। এখন মেকানিক্যালের কাজ চলমান আছে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামে সেতু নির্মাণকারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল।
২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সেতুটি সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। এরপরও সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ। এ অবস্থার মধ্যেও সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করে। ট্রেন চলাচল করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। যাত্রী ও চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।