গত শুক্রবার চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, ১১ এপ্রিল মারা গেছেন ৯ জন, চট্টগ্রামে করোনায় এ পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ৪৪৫ জন। শুক্রবার শনাক্ত ৩০৫, সংক্রমণের হার ২৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীতে আক্রান্ত ৩৭ হাজার ২১৫ জন এবং মহানগরীর বাইরে উপজেলায় ৯ হাজার ১৬৫ জনসহ মোট আক্রান্ত ৪৬ হাজার ৩৮০ জন। আক্রান্তের দিক থেকে ঢাকার পরই চট্টগ্রাম মহানগর। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আক্রান্ত যুবকরা ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। শতকরা ৫৪ ভাগের কিছু বেশি। মৃত্যুর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগের বয়স পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে। দেশে গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১০১ জন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
চট্টগ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসা সেবা একেবারেই অপ্রতুল। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) অপরিহার্য অথচ সরকারিভাবে চমেক হাসপাতালে ১০টি, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি, অথচ মহানগরী ছাড়াও জেলা উপজেলা থেকে সংকটাপন্ন রোগীরা আইসিইউ’র আশায় চট্টগ্রামে আসছেন, কিন্তু তারা আইসিইউ’র সুযোগ নিতে পারছেন না। চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সংখ্যা ৮৩টি। সবগুলিই ভর্তি রোগীতে। তা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা ব্যয় অসম্ভব বেশি যা এমনকি মধ্যবিত্তের আয়ত্তের বাইরে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নতুন ৮টি আইসিইউ শয্যা ১ বছরেও চালু করা যায়নি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলি চালু করতে চিকিৎসক ও জনবল ঘাটতির কথা বলেছে। ১ বছরেও এর সুরাহা করা যায়নি অথচ সংকটাপন্ন রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে দক্ষিণ আফ্রিকা ধরণের সংক্রমণ অতি তীব্র ও শক্তিশালী, সংক্রমণের প্রথম থেকেই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে, হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবা নেওয়া বাঁচার একমাত্র উপায়। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে আইসিইউ এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়ে। সরকারি উদ্যোগে তাই শয্যাসংখ্যা ও আইসিইউ দ্রুত বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
করোনাকালের ১ বছর হয়ে গেলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। ধনীব্যক্তিরা ব্যসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন কিন্তু সাধারণ মানুষের সরকারি সেবা ছাড়াতো উপায় নেই, আর এটি জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। কেন না এই সাধারণ মানুষদের শ্রমে অর্থনীতির চাকা সচল থাকছে, উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে তাদের কল্যাণেই। দেশের রাজস্ব ভা-ার স্ফীত হচ্ছে অথচ তারা রোগে, অসুস্থ অবস্থায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবেন না এটি প্রত্যাশিত নয়।
রোগের টেস্ট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন, করোনার সময় এটি আরো বেশি অনুভূত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের জুনে টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দিলেও আজ পর্যন্ত নিয়োগ হয়নি। অনিয়ম, দুর্নীতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন এসেছে। মোট কথা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনার জাতীয় দুর্যোগ সামাল দিতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল অবস্থায় তা-ই দৃশ্যমান। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, দেশের ৩৬টি জেলায় আইসিইউ নেই, রোগীরা কোথায় চিকিৎসা নেবে? প্রধানমন্ত্রী গত বছর জুনে প্রতিটি জেলায় আইসিইউ স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তা করা যায়নি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তার এটিও একটি দৃষ্টান্ত।
আমরা মনে করি, চট্টগ্রামে আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা, হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা এবং আইসিইউ বাড়াতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থানেবে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের যথাযথ ভূমিকা আশা করে চট্টগ্রামবাসী।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে সরকারি নির্দেশনা মানুষ মেনে চলতে হবে – এটি করোনা দুর্যোগে বড় তাগিদ। এ ব্যাপারে কমিউনিটিভিত্তিক স্বেচ্ছাকার্যক্রম গড়ে তোলাও জরুরি। ছোট বড় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনগুলির জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত, যাতে এই জাতীয় বিপদে তারা জনগণের ভরসার স্থল হয়ে উঠতে পারেন।